কল্পনা করুন তো, ৯৪০০০ বর্গফুটের কোন ধরনের বাধাহীন বিলাসবহুল ভবনে ঘুরে বেড়াচ্ছে দাগি সব আসামি। তারা বই পড়ছে, বিড়াল পালছে, খেলাধুলা করছে, প্রতিদিন ঘণ্টাব্যাপী প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলছে। এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু দিন পর পর দেখা করছে। আসলে ওই বিলাসবহুল ভবনটি কোন হোটেল নয়, নয় কোন বিলাসিতার জায়গা। এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের চেসির কাউন্টি কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি নামের কারাগার। ৫৪ বছর বয়সী রিক ভ্যান উইকলার হচ্ছেন ২৩০ জন নারী ও পুরুষ বন্দি সমেত এই কারাগারের প্রধান প্রশাসক। সারা পৃথিবীর মাত্র ৫ শতাংশ জনগণের বাস যুক্তরাষ্ট্রে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে বন্দি আছে দুনিয়ার মোট বন্দির এক-চতুর্থাংশ! যুক্তরাষ্ট্রের মোট কারাবন্দির সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হার অত্যন্ত বেশি। ভ্যান উইকলার তার আওতাধীন এই কারাগারের নতুন ভবন নির্মাণের সময় দেশব্যাপী বিভিন্ন কারাগার ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি উপলব্ধি করেন, বন্দিদের আটকে রাখার জন্য কাঁটাতারের বেড়ার প্রয়োজন নেই। বরং এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে বন্দিরা পালাবার কথা চিন্তাই না করে। একই সঙ্গে যেন তারা আত্মশুদ্ধির পথ খুঁজে পায়। এই আরামদায়ক কারাগারের দুই সঙ্গী আমান্ডা আর মারিয়া প্রায়ই স্ক্রাবল নামের একটি খেলা খেলেন। একজন আবার পোলো নামের একটি বিড়ালও পালেন! ভ্যান উইকলার বিশ্বাস করেন, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের আত্মশুদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত। এর মাধ্যমেই দেশব্যাপী অপরাধীদের সংখ্যা কমে আসবে। কারাগার রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থও বেঁচে যাবে। তিনি বলেন, সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত আসামিকেও এখানে ১৫ দিনের বেশি একাকী বন্দি অবস্থায় রাখা হয় না। সঙ্গীদের সঙ্গে একত্রে রাখা হয়। তাদের জন্য খেলাধুলার সুবিধাও দেয়া হয়। অনেক মানুষ মনেই করেন না এটা একটা জেলখানা। তারা মনে করেন এটা একটা স্কুল। নিরাপত্তা বেড়া না থাকলেও সমপূর্ণ এলাকা গোপন কামরা থেকে নিয়ন্ত্রিত ক্যামেরার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ভ্যান উইকলার মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, দেশের অন্য কারাগারের তুলনায় তার বন্দিরা অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়। তারা আত্মশুদ্ধির পথও খুঁজে পায়। তিনি দাবি করেন, তার এখান থেকে শাস্তি শেষে বের হওয়া আসামিদের পুনরায় অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার অনেক কম। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী কারাগারগুলোতে এই কাঠামো অনুসরণ করা উচিত।