রাজনীতি ডেস্ক
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ ও তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর গ্রন্থ প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জন্য অতীতের আত্মত্যাগকে অর্থবহ করতে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, নাগরিক অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উঠে আসে।
বক্তব্যে তিনি অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহর শিক্ষাবিজ্ঞানে, নাগরিক আন্দোলনে এবং রাষ্ট্রবিষয়ক চিন্তায় ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক উল্লাহ বিভিন্ন সময়ে নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার এবং ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর গবেষণা, লেখালেখি ও সামাজিক সক্রিয়তা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিগত প্রশ্নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে বলে মির্জা ফখরুল অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপির রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কার–সংক্রান্ত বিভিন্ন রূপরেখা তৈরিতে অধ্যাপক উল্লাহর তাত্ত্বিক অবদান গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ প্রণয়নের সময় তাঁর পরামর্শ ও বিশ্লেষণ দলের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল।
অনুষ্ঠানে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের প্রেক্ষাপটে বক্তারা অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর গবেষণা-আগ্রহ, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক সমালোচনামূলক চিন্তাধারা এবং রাষ্ট্র কাঠামো বিশ্লেষণে তাঁর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। এই প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, অধ্যাপক উল্লাহর রচিত বইগুলোতে রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমাজ ও গণতন্ত্র সম্পর্কিত নানা তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে, যা সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণে প্রাসঙ্গিক। তাঁর মতে, এসব গ্রন্থ দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আলোচনাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনার কয়েকটি দিকও প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনে সর্বস্তরের মানুষকে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ ও তরুণ প্রজন্মকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি এবং সমান অধিকারের নিশ্চয়তা ছাড়া রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতার শেষ অংশে মির্জা ফখরুল অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক শুভকামনা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি উপমহাদেশে নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার সামাজিক ও শিক্ষাবিষয়ক আন্দোলন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে এবং বর্তমান প্রজন্মের জন্য এখনও তা গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণা।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বক্তারাও অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর গবেষণা ও নাগরিক আন্দোলনে সম্পৃক্ততার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো, অর্থনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার প্রশ্নে তাঁর গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে দিকনির্দেশনা দিতে পারে। সভায় আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণের জন্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত গবেষণা–ভিত্তিক উদ্যোগ অপরিহার্য।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আলোচনায় এমন অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কারণ এসব আলোচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো, আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাবনা উঠে আসে। এই ধরনের সংলাপ দেশজ নীতিনির্ধারণে গবেষণা–সমর্থিত দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বও তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানের সার্বিক আলোচনায় রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। বক্তারা বলেন, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম কর্মীদের গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন প্রশ্নে জনসম্পৃক্ত আলোচনা জোরদার করা হলে তা দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক চর্চাকে স্থায়িত্ব দেবে।
সভা শেষে আয়োজকরা প্রকাশিত গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু এবং গবেষণার ক্ষেত্রগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। তাঁদের মতে, গবেষণাধর্মী প্রকাশনা রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বোঝার ক্ষেত্রে পাঠককে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে এবং নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।




