জোবায়েদ হত্যায় বর্ষাসহ ৩ জনের দায় স্বীকার

SHARE

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় তার ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষাসহ তিনজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের বন্ধু প্রীতম চন্দ্র দাস সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার পৃথক চার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

দায় স্বীকার করা অন্য আসামিরা হলেন বর্ষার প্রেমিক মো. মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, তিন আসামি ও এক সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার উপপরিদর্শক মো. আশরাফ হোসেন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।

আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়ার আদালতে বর্ষা, আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে বর্ষার প্রেমিক মো. মাহির রহমান এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান জবানবন্দি দেন।
এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুজ্জামানের আদালতে প্রীতম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। পরে তাকে পরিবারের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, মাহিরের সঙ্গে বর্ষার দেড় বছর আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক।
জোবায়েদ প্রায় এক বছর আগে থেকে বর্ষাকে টিউশন করান। এরই এক পর্যায়ে শিক্ষকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে করে মাহির ও বর্ষার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ তৈরি হয়। ঘটনার এক মাস আগে মাহির জানতে পারেন জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাহির মেনে নিতে পারেননি এবং বর্ষাও মাহিরকে বলেন, ‘স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর স্যারকে সহ্য করতে পারছি না।

এ বিষয়ে মাহির ও বর্ষা জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেন। জোবায়েদ বাসায় কখন পড়াতে আসেন এবং কখন চলে যান নিয়মিত বর্ষা মাহিরকে জানান। মাহির তার বন্ধু আয়লানের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে আগানগর বউ বাজার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন।

গত রবিবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র মো. জোবায়েদ হোসেন বংশাল থানাধীন ৩১ নং ওয়ার্ডস্থ নুর বক্স লেন এব ১৫ নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় টিউশন করাতে যান। জোবায়েদ বর্ষাকে টিউশন করাতে গিয়ে বাসার নিচতলার সিঁড়ির নিচে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা বর্ষার সাবেক প্রেমিক মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন ওই সময় জোবায়েদকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি বর্ষার সঙ্গে সম্পর্ক করেন কেন? এতে কথা-কাটাকাটি শুরু হলে মাহিরের ব্যাগে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু বের করে গলার ডান পাশে আঘাত করে খুন করেন।

এ সময় বর্ষা তিনতলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বাদী হয়ে রাজধানীর বংশাল থানায় হত্যা মামলা করেন।

এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ভাংনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাহির রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাসা থেকে বর্ষাকে আটক করে বংশাল থানা পুলিশ। মামলা করার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সোমবার রাত ১০টার দিকে পল্টনের চামেলীবাগ শান্তিনগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. জোবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন। প্রতিদিনের মতো তিনি ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১ নং ওয়ার্ডে নুর বক্স লেন এর ১৫ নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় পড়ানোর জন্য যান। একই তারিখে সন্ধ্যা প্রায় ৫টা ৪৮ মিনিটের সময় ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানান যে জোবায়েদ স্যার খুন হয়ে গেছেন, কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।

এ বিষয়টি ওইদিন রাত অনুমানিক ৭টার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ভুক্তভোগী জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান। পরে এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ওই ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় তিনি সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের ৩য় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে গেলে সিঁড়ির ওপর জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান। পরে ময়নাতদন্ত শেষে গত ২০ অক্টোবর জোবায়েদকে কুমিল্লার কৃষ্ণপুর গ্রামে দাফন করা হয়।