ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা চুক্তির ভেতরেই ‘শয়তান’ রয়েছে : বাদশাহ আবদুল্লাহ

SHARE

মিসরের শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠিত একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পূর্বে বিবিসি প্যানোরামার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। এমন একটি দিনে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেদিন হামাস গাজায় আটক শেষ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছে।

হামাস এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে বাদশাহ বলেন, ‘কাতার এবং মিসরের মতো দেশগুলো তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। যারা মনে করে এই চুক্তি সবাই মেনে চলবে।
তারা খুবই আশাবাদী।’

কিন্তু রাজা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা চুক্তির ‘বিষয়বস্তুর ভেতরেই শয়তান রয়েছে’ এবং গাজায় একবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো সতর্ক করে বলেছেন, চলমান শান্তি প্রক্রিয়া যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে না হয়, তবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংসের দিকে আগাবে।

সাক্ষাৎকারের সময় তিনি জানান, গত দুই বছরের সহিংসতা, ইরান ও ইসরায়েলের উত্তেজনা, কাতারে থাকা হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলা এবং অন্যান্য সংঘর্ষ এ অঞ্চলে গভীর বিভাজন ও সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।
তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা কি এমন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, যেখানে পুরো অঞ্চলটি (মধ্যপ্রাচ্য) হয় আঞ্চলিকভাবে (দেশভিত্তিক) বা উত্তর-দক্ষিণে (বিভক্ত মতাদর্শ) বিভাজিত হয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে?’

নেতানিয়াহুর কথা বলতে গিয়ে জর্দানের এই নেতা বলেন, তিনি ‘তার কথায় বিশ্বাস করেন না’। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, এমন কিছু ইসরায়েলি আছেন যাদের সঙ্গে আরব নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহর মতে, সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান। পশ্চিম তীর ও গাজাসহ ফিলিস্তিন অঞ্চলে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান করা সম্ভব হবে, এটা না হলে সমস্যা পুনরায় উত্থান করবে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘যদি আমরা এই সমস্যার সমাধান না করি, যদি আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ এবং আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে না পাই, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।’

আব্দুল্লাহ মনে করে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমাদের আলোচনায়, তিনি জানেন যে এটি কেবল গাজা নয়, এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিষয় নয়। তিনি পুরো অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার দিকে তাকিয়ে আছেন। ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ না থাকলে যা ঘটবে না।

বাদশাহ আভাষ দেন যে, যদিও জর্দান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৯৪ সাল থেকে শান্তি চুক্তি রয়েছে এবং জর্দানে অনেকেই এ চুক্তির বিরোধিতায় থাকলেও দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, মানুষের ভবিষ্যৎ যদি না নিশ্চিত করা যায়, তাহলে আমরাই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবো — এই চিন্তা থেকেই তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে অটল।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে প্রত্যাখ্যান করায় অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক জটিলতা আরো বেড়েছে। তবুও বাদশাহ মনে করেন, কিছু ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে আরব নেতারা শান্তির জন্য কাজ করতে সক্ষম হবে।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির রিপোর্ট করা হয়েছে — যা বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব আরো গতিশীল করেছে।

শেষে বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘শান্তিই একমাত্র সমাধান। বিকল্প থাকলে হয়তো এই অঞ্চলেরই অবসান ঘটবে।’ তিনি ব্যক্তিগতভাবেও তার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যতের দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে শান্তির স্বার্থে কাজ চলছে বলে বিশ্বাস করেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।