ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ নিয়ে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল আথারটনের মন্তব্যের জবাব দিয়েছে ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আথারটনের প্রস্তাবের বিষয়ে বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এমন প্রস্তাব দেওয়া সহজ হলেও বাস্তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান ও স্পনসররা এমন সূচি মেনে নেবে না যেখানে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে না।
বিসিসিআই কর্মকর্তার ভাষায়, ‘এইসব বলা সহজ, কিন্তু স্পনসর ও সম্প্রচারকরা কি এতে রাজি হবে? বর্তমান সময়ে যদি কোনো বড় দল, শুধু ভারত নয়, কোনো টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে স্পনসর পাওয়া খুব কঠিন হবে।’
উল্লেখ্য, আথারটনের মন্তব্য এসেছে সম্প্রতি শেষ হওয়া এশিয়া কাপের পরিপ্রেক্ষিতে।
ওই টুর্নামেন্টে ভারত ও পাকিস্তান তিনবার মুখোমুখি হয়, যার মধ্যে একটি ছিল ফাইনাল। পুরো আসর জুড়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনা ও অস্পোর্টসম্যান আচরণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকি ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আঘার সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানান।
এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নারী ক্রিকেটেও।
কলম্বোতে অনুষ্ঠিত নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে দুই দলের অধিনায়ক ফাতিমা সানা ও হরমনপ্রীত কৌরও একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাননি।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য টাইমসের এর কলামে অ্যাথারটন লিখেছেন, আইসিসি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সূচি তৈরি করে থাকে — যার পেছনে মূল কারণ বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক স্বার্থ।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত সবগুলো ১১টি আইসিসি টুর্নামেন্টেই দুই দল মুখোমুখি হয়েছে গ্রুপ পর্বে।
আথারটনের ভাষায়, ‘এই ম্যাচের বিশাল অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে।
এ কারণেই ২০২৩-২৭ মেয়াদের জন্য আইসিসি টুর্নামেন্টের সম্প্রচার অধিকার প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে।’
তিনি আরো লেখেন, দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো অর্থনৈতিকভাবে আগের মতো মূল্যবান না থাকায় আইসিসি ইভেন্টগুলোর গুরুত্ব বেড়েছে, আর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সেসব ইভেন্টে সম্প্রচারক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
তবে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মনে করেন, এই ম্যাচ এখন ক্রীড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে রাজনৈতিক ও আবেগীয় প্রদর্শনের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। আথারটন বলেন, ‘একসময় ক্রিকেট কূটনৈতিক সেতুবন্ধনের মাধ্যম ছিল, এখন তা স্পষ্টতই রাজনৈতিক প্রচারণা ও উত্তেজনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র আর্থিক লাভের জন্য বড় টুর্নামেন্টের সূচি এমনভাবে সাজানো কোনো গম্ভীর খেলাধুলার মানদণ্ড হতে পারে না।
’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘যেভাবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাণিজ্যিকভাবে শোষণ করা হচ্ছে, তা বন্ধ করার এখনই সময়।’
৫৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেট বিশ্লেষক শেষ করেন এই আহ্বান জানিয়ে যে ‘পরবর্তী সম্প্রচার চুক্তি থেকে শুরু করে টুর্নামেন্ট ড্র যেন স্বচ্ছভাবে হয়। ভারত ও পাকিস্তান যদি প্রতিবার মুখোমুখি না-ও হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।’