গাজা পরিকল্পনায় হামাসের ইতিবাচক সাড়া, কিন্তু রয়ে গেছে প্রশ্ন

SHARE

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাস তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলটি গাজার প্রশাসন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট বা বিশেষজ্ঞদের কাছে হস্তান্তর করতে এবং সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি তাদের নিরস্ত্রীকরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কিছু জানায়নি।

তারা বলেছে, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ‘অবিলম্বে শান্তি আলোচনায় প্রবেশ’ করতে ইচ্ছুক।
হামাসের বিবৃতির পর এক ভিডিও ভাষণে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন, অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছে। আবার সতর্ক করে বলেছেন, চূড়ান্ত কথাটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন— হামাস ‘স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত’। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে একটি পোস্টে ইসরায়েলকে ‘অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে গাজার চিকিৎসা সূত্র অনুসারে, ট্রাম্প হামলা বন্ধ করতে বললেও ইসরায়েল গাজায় তাদের মারাত্মক বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল শুক্রবার গাজা উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এই বিবৃতি এমন একসময় এসেছে, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসকে রবিবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রস্তাবে সম্মতি না জানালে ‘গাজায় নরক নেমে আসবে’ বলে শেষ আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তাই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন, তা অনুমান করাই যায়।
বিশেষ করে এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেছেন, যা সংশয় আরো বাড়িয়েছে।

গাজায় বোমাবর্ষণ করা নিয়ে বিবৃতির শেষে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, হামাস ভবিষ্যতে গাজার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় ভূমিকা রাখবে। এই বিষয়টি ইসরায়েলের কাছে অপছন্দনীয় হতে পারে। তবুও হামাসের এই বিবৃতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘আজ একটি বড় দিন’।
এ ছাড়া তিনি ধন্যবাদ জানান একাধিক দেশকে, যারা এই পরিকল্পনা তৈরিতে সহযোগিতা করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে শান্তি বাস্তবায়নের পথে এগোনোর আগে এখনো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট নিজেও স্বীকার করেছেন, এখনো কিছু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি।

ট্রাম্প বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা দেখা যাক। আমাদের এখন সব কিছু লিখিত এবং নিশ্চিত করতে হবে।’ এদিকে হামাস অবশিষ্ট জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হলেও, তা আলোচনার মাধ্যমে এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের ওপর নির্ভরশীল। তবে এ খবর ইসরায়েলি জিম্মি পরিবারের জন্য আশা জাগাচ্ছে, যারা অনেক দিন ধরে এ রকম একটি খবরের অপেক্ষায় ছিলেন।

মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে উল্লিখিত বিনিময় কাঠামো অনুযায়ী জীবিত এবং মৃত সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি, যদি মাঠপর্যায়ের বাস্তব শর্তগুলো পূরণ হয়।’

ট্রাম্প এই সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউসে যেভাবে এই বিনিময়কাঠামো ব্যাখ্যা করেন, তাতে বলা হয়েছে তৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে বন্দি থাকা জীবিত সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি। এ ছাড়া হামাস মৃত জিম্মিদের দেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, হামাস এখনো গাজায় ৪৮ জন জিম্মিকে আটক করে রেখেছে, যাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত আছেন।

হামাস মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, গাজার শাসনভার নিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এই দীর্ঘ ২০ দফা পরিকল্পনার আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক এখনো অনুপস্থিত রয়ে গেছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় অনুপস্থিত বিষয়টি হলো— হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করার দাবি।

এখন ইসরায়েলি সরকার হামাসের বিবৃতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে, যেন প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝা যায়। তাদের সিদ্ধান্ত নেবে—এটি প্রকৃত সদিচ্ছার প্রকাশ কি না, নাকি শুধু সময়ক্ষেপণ করে পুনরায় দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার দরজা খোলার কৌশল।

সূত্র : বিবিসি