ব্রাজিলে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে বলসোনারোর ২৭ বছরের কারাদণ্ড

SHARE

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত করে ২৭ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় টিকে থাকার ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে তার বিরুদ্ধে এ রায় দেওয়া হয়।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত করে ২৭ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ বিচারকের একটি বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করে।

এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তারা বলসোনারোকে ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় টিকে থাকার ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।

পাঁচ বিচারকের মধ্যে চারজন তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন, একজন খালাসের পক্ষে ভোট দেন। রায় ঘোষণার পর বলসোনারোর আইনজীবীরা এটিকে “অতিরিক্ত কঠোর” বলে উল্লেখ করেন এবং আপিলের ঘোষণা দেন।

সুপ্রিম কোর্ট একইসঙ্গে তাকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সব ধরনের সরকারি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

৭০ বছর বয়সী বলসোনারো বর্তমানে গৃহবন্দি আছেন। পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় আদালত তাকে আগে থেকেই এভাবে আটক করেছিলেন। তবে তিনি রায়ের শেষ ধাপের শুনানিতে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না।

বলসোনারো আগে থেকেই দাবি করে আসছেন যে এই বিচার তার ২০২৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকানোর জন্য সাজানো হয়েছে। তিনি এটিকে “ডাইনি খোঁজা” বলেও অভিহিত করেছেন।

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এ ঘটনাকে নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন, “আমার সঙ্গেও এমন করার চেষ্টা হয়েছিল, তবে তারা সফল হয়নি।”

বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট অন্যায়ভাবে বলসোনারোকে কারাদণ্ড দিয়েছে এবং এ ধরনের ‘উইচ হান্ট’-এর জবাব দেওয়া হবে।

এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, “আজকের মতো হুমকি ব্রাজিলের গণতন্ত্রকে ভয় দেখাতে পারবে না। রেকর্ডে থাকা প্রমাণ উপেক্ষা করে ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষকে আক্রমণ করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”

আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপিলে সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে, কারণ সাধারণত অন্তত দু’জন বিচারক খালাসের পক্ষে না থাকলে রায় পুনর্বিবেচনা করা যায় না।

বলসোনারোর বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, যেগুলো সবই নির্বাচনে হার মানার পর ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার প্রচেষ্টাকে ঘিরে। প্রসিকিউটররা জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন এবং সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী লুলা দা সিলভা, তার সহপ্রার্থী ও একজন সুপ্রিম কোর্ট বিচারককে হত্যার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানতেন।

আদালত আরও সাতজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, যাদের মধ্যে সাবেক দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ও নিরাপত্তা মন্ত্রীসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।

যদিও সেনাবাহিনীর যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ায় অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, তবে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি বলসোনারোর সমর্থকরা সরকারি ভবনে হামলা চালায়। এ সময় দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয় এবং দেড় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।