ঘরের মাটিতে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সাম্ভাব্য শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন লিওনেল মেসি। পুরো পরিবার গ্যালারিতে আর মাঠে চমক দেখালেন এই ক্ষুদে জাদুকর। মেসির দুর্দান্ত পারফরমেন্স ও দুই গোলসহ ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেশের মাটিতে তাঁর প্রথম ম্যাচটা ছিল ২০ বছর আগে এই স্টেডিয়ামেই।
দিনটা ছিল ৯ অক্টোবর, ২০০৫। আজ সেই একই মঞ্চে মেসির বিশেষ এই রাতে এস্তাদিও মনুমেন্তালে হাজির হয়েছিলেন মেসির স্ত্রী আন্তোনেলা, তিন ছেলে, বাবা-মা। ইতিহাসের সাক্ষী হতে হাজির হয়েছিলেন হাজারো আর্জেন্টাইন। কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে শেষ ঝলকটাও দারুণভাবে দেখিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এই মহাতারকা।
ওয়ার্ম-আপ এবং জাতীয় সংগীত চলাকালে বেশ আবেগী মেসির চোখে আনন্দাশ্রু এনে দিল দর্শকদের করতালি ও উচ্চশব্দে। ম্যাচ শেষে আলোর ঝলকানির সঙ্গে ভক্ত-সমর্থকদের জয় উদযাপন ও মেসির বিশেষ ম্যাচকে ঘিরে তীব্র উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ ঘটল যেন। গ্যালারির কাছে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে তারই জবাব দিলেন এলএমটেন।
ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য ধরে রেখেছিল আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা।
ম্যাচের ৭৭ শতাংশ বল দখলের পাশাপাশি মেসি-আলভারেজ-আলমাদারা ১৭টি শট নেয়। যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ভেনেজুয়েলা ৫ শটের একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।
ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়োনোর ক্রস পেয়ে হেডে বল জালে জড়ান ক্রিস্টিয়ান রোমেরো।
তবে কাটা পড়লেন অফসাইডের দাগে। গতিময় ১৫ মিনিটের পর খেলায় কিছুটা ধীরস্থির হয় আর্জেন্টিনা। ২১ মিনিটে নিকোলাস তালিয়াফিকোর নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক রোমো। এরপর ম্যাচের ডেডলক ভাঙতে অপেক্ষা করতে হয় ৩৮ মিনিট পর্যন্ত। প্রতিপক্ষ ফুটবলারের পায়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর সুযোগটা নেন লিয়েন্দ্রো পারেদেস। তার বাড়ানো বল দারুণ ক্ষিপ্রতায় নিয়ন্ত্রণে নেন হুলিয়ান আলভারেজ।
বক্সে ঢুকে এই অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ তারকা দুজনের মাঝ দিয়ে আলতো করে বল বাড়ান মেসিকে। লম্বা পা বাড়িয়ে বলের গতি কমিয়ে চিপ শটে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে তিনি জালে জড়ান। লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে ৬০ মিনিটের মাথায় রদ্রিগো ডি পলের সঙ্গে ওয়ান-টু পাসের পর শট নিয়েছিলেন মেসি। তাকে হতাশ করেন ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এরপর প্রতিপক্ষকে আরো চেপে ধরে। তাদের দ্বিতীয় গোলটি আসে দুই বদলি খেলোয়াড় নিকো গঞ্জালেস ও লাউতারো মার্টিনেজের কল্যাণে।
মাঠে নামার দ্বিতীয় মিনিটেই লাউতারো মার্টিনেজ স্কোরশিটে নাম তোলেন। বাঁ পায়ে ডি বক্সের ভেতর ক্রস দেন নিকো, মাথা ছুঁয়ে লিড দ্বিগুণ করেন লাউতারো। চার মিনিট বাদেই এবার গোলের উপলক্ষ্য এনে দিলেন মেসি। বক্সে থিয়েগো আলমাদার পাস পেয়ে কয়েকজনের মাঝ দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ফিনিশিং দেন তিনি। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি পেয়ে গেলেন নিজের ১১৪তম গোল।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দুয়েক আগে হ্যাটট্রিকও পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু অফসাইড রীতি এবার তাকে দমিয়ে রাখল। ইন্টার মায়ামি মহাতারকার হেডে দুর্লভ গোল হতে পারত এটি। কিন্তু হেড দেওয়ার সময় তার সামনে ছিলেন ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক। অফসাইড লাইন বেশ আগেই অতিক্রম করে গেছেন মেসি। তবে জোড়া গোলে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েই নিজের বিশেষ ম্যাচের উদযাপন তার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়।