ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রধানমন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে লোহিত সাগরে একটি তেলবাহী জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করল ইয়েমেনের হুতি আন্দোলন।
ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটি সোমবার জানায়, তারা লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী স্কারলেট রে নামের একটি জাহাজে সরাসরি আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে জাহাজটি ইসরায়েলি মালিকানাধীন বলে জানিয়েছে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যামব্রে। তবে ওই অঞ্চলের নৌ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) হুতির দাবিকে খণ্ডন করে জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি রবিবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে।
ইউকেএমটিও আরো বলেছে, জাহাজের ক্রুরা তাদের জাহাজের কাছাকাছি পানিতে একটি অজ্ঞাত বস্তু পড়ার ও প্রবল বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছেন। তবে সবাই অক্ষত ছিলেন এবং জাহাজটি পুনরায় যাত্রা শুরু করেছে।
লোহিত সাগরে হুতির ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ ঘটনা এটি। জুলাই মাসে তারা দুটি তেলবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার বিরোধিতার অংশ হিসেবে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
এর আগে শনিবার হুতি ঘোষণা করে, প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালেব আল-রাহাবি ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তাদের জানাজা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। হুতি নেতা আবদেল-মালিক আল-হুতি তাদেরকে পুরো ইয়েমেনের শহীদ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক লোকদের ওপর বর্বরতার অভিযোগ এনেছেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রী ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের টার্গেট করার এই অপরাধ ইসরায়েলি শত্রুর অপরাধের তালিকায় যুক্ত হলো।
এদিকে হুতি যোদ্ধারা জাতিসংঘের অফিসে অভিযান চালিয়ে অন্তত ১১ জন কর্মীকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক করলে রবিবার উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। জাতিসংঘ অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। হুতির হাতে আরো ২৩ জন জাতিসংঘ কর্মী আটক রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে ২০২১ সাল থেকে আটক রাখা হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও হুতির মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটায় ওমান, যার ফলে ওয়াশিংটন ইয়েমেনে তাদের নিয়মিত বিমান হামলা বন্ধ করে।
তবে হুতির প্রধান আলোচক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেছেন, এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অন্তর্ভুক্ত না।
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের ভূখণ্ড ও জাহাজে হামলার জন্য হুতি কঠোর মাশুল দেবে।
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী হুতি ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে বহু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা লোহিত সাগর হয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।