একসময় সাংবাদিকতা ছিলো মানুষের সত্য কণ্ঠস্বর। এই পেশা ছিলো ন্যায়বিচার, মানবতা এবং সমাজ পরিবর্তনের এক বলিষ্ঠ হাতিয়ার। সাহসী সাংবাদিকেরা রক্ত দিয়ে সত্যের জয়গান লিখেছেন, কারাগারে থেকেও জনগণের জন্য কলম চালিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে অনেক ক্ষেত্রেই সেই মহৎ পেশাটি যেন পুঁজির কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
আজকের বাস্তবতা হলো—টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতা ক্রমেই বিকৃত হয়ে পড়ছে। নির্দোষ মানুষকে অপরাধী বানিয়ে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়, আর প্রকৃত অপরাধীরা টাকা দিয়ে হয়ে ওঠে ‘সম্মানিত অতিথি’। এক শ্রেণির সুবিধাবাদী গণমাধ্যম কর্মী ও মালিক পক্ষ এই প্রক্রিয়ায় জড়িত। ফলাফল? সমাজের নৈতিক কাঠামো চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই দুরবস্থার চিত্র আরও করুণ। কিছু গণমাধ্যমে এখন আর অনুসন্ধান নেই, মানবতা নেই, আছে শুধুই চাটুকারিতা আর ‘পেইড কনটেন্ট’। সত্যকে গলা টিপে মেরে দেওয়া হচ্ছে, আর মিথ্যার ওপর নির্মিত হচ্ছে ক্যারিয়ার, রাজনীতি ও ব্যবসার সাম্রাজ্য। এতে কেবল ব্যক্তি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো জাতি।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষও গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজবের রাজত্ব এরই ফসল। কারণ তারা জানে—প্রধান সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের রিপোর্ট সব সময় সত্য নয়। এটা গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের জন্য এক বড় বিপদ।
তবে আশার কথা হলো—এই অন্ধকারের মাঝেও কিছু আলোকবর্তিকা এখনও জ্বলে আছে। কিছু নির্ভীক সাংবাদিক এখনো আছেন, যারা সত্য বলার সাহস রাখেন, যারা ঘুষের লোভ না পেয়ে অনুসন্ধান চালান। তাঁদের হাত ধরেই সাংবাদিকতা আবার ফিরে পেতে পারে তার হারানো গৌরব।
এখন সময়, পেশাদার সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নীতিমালাকে শক্তিশালী করার। দরকার গণমাধ্যম মালিকদের দায়বদ্ধতা, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ, এবং রাষ্ট্রের কঠোর নজরদারি। নাহলে শুধু সাংবাদিকতা নয়—এই পেশার পতনের সঙ্গে সঙ্গে পতন ঘটবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সামগ্রিক মানবিক সমাজ কাঠামোর।
সাংবাদিকতা কোনো ব্যবসা নয়—এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব। সেটি যেন আমরা ভুলে না যাই।