‘সিটি নির্বাচনে জামায়াত জোটের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেছে’

SHARE

jamat bnp2প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন সিটি নির্বাচনে জামায়াত ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেছে। প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি আজ প্রকাশিত হয়েছে।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি পক্ষে  কাজ করা আদর্শ ঢাকা আন্তোলনের আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীনকে জামায়াত নিয়ে  দুটো প্রশ্ন করে প্রথম আলো ।

একটি ছিল: কেমব্রিজ থেকে সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ে ‘জামায়াত বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে আখ্যায়িত মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেছেন, ‘বিএনপি যখন দুর্বল হবে, তখন জামায়াত সাফল্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকে সংগঠিত করতে পারবে। দীর্ঘ মেয়াদে এটা প্রকৃত সম্ভাবনা। কারণ, খালেদা জিয়ার পরে বিএনপি ভেঙে যাবে।’ আপনার মন্তব্য?

উত্তরে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “আমি এ কথার সঙ্গে একমত নই। তার কারণ হলো, বিএনপি এমন একটি দল, যার তৃণমূল পর্যন্ত সমর্থন ও ভিত্তি রয়েছে। এবং কোথাও কোথাও একটু শিথিল হচ্ছে বটে কিন্তু এখন পর্যন্ত দলটি এই পর্যায়ে যায়নি যে খালেদা জিয়ার পরে দলটি ভেঙে যাবে।”

দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো: সিটি নির্বাচন থেকে জামায়াতের প্রাপ্তি কী? প্রশ্নটি এ কারণে যে আপনাদের বর্জন সত্ত্বেও তারা কিছু জায়গায় জিতেছে?

এর জবারে এমাজউদ্দীন বলেছেন, “জিতেছে, তবে আমি বলব ২০-দলীয় জোটভুক্ত দল হিসেবে এর ফলে তাদের দিক থেকে একটা অনৈতিক কাজও হয়েছে। কারণ, সবাই যখন বর্জন করছে, তারা তাদের প্রার্থী রেখে দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।”

এক প্রশ্নের জবাবে এমাজউদ্দীন আহমদ সিটি নির্বাচন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছেন, “ নির্বাচন কমিশন যে নিজেই একটি নির্বাচন এভাবে নষ্ট করতে পারে, সেটা আমি আশা করিনি। আশা করেছিলাম, আমরা একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছাব। কিন্তু সিটি নির্বাচনে যে ব্যাপক কারচুপি হলো, বিশেষ করে ইসি যেভাবে তা সমর্থন করল, তা একেবারেই আশা করিনি। আমি খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

এই নির্বাচন কমিশনের কাছে কেন তিনি ভালো  কিছু আশা করেছিলেন- এই প্রশ্নের জবাবে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “ভদ্রলোক (সিইসি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার থেকে তিনি প্রায় নয় বছরের কনিষ্ঠ। তাকে বলেছিলাম, আমরা বেশি কিছু চাই না, দুটো জিনিস চাই। প্রথমত, প্রত্যেক ভোটার যাতে তাদের মনমতো প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক প্রার্থী যেন ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারেন। বললাম, এটুকু না পারলে এখানে আপনারা আছেন কেন? পরে দেখা গেল তাঁর অফিসের পাশে বসেই লোকজন সিল মারছে। পরে বলেছেন, নিয়মমাফিক হয়েছে। এই বয়সের মানুষ যদি এটা বলতে পারেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব ?”

এমাজউদ্দীন আহমদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সাধারণ নির্বাচন করার যে অবস্থান আপনি নিয়েছিলেন, তাতে কি চিড় ধরল? নাকি আপনি অটল থাকবেন?”

উত্তরে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “না, আর অটল থাকতে পারছি না। যখন আমি ওই কথাটা বলেছিলাম, তখনো কতগুলো শর্তসাপেক্ষে বলেছিলাম। সেগুলো ছিল ইসিকে সর্বতোভাবে শক্তিশালী করা। রিটার্নিং অফিসারসহ যারা নির্বাচনী ব্যবস্থাটা চালু রাখবেন, তাদের নিরপেক্ষ হতে হবে; দলীয় লোক যাতে না থাকে। যেমন, একটা নির্বাচন বৃটেনে দেখলাম। ভারতেও তা-ই চলছে। ভারতে পাঁচজন কমিশনার নেই, একজন সিইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করছেন।”

সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে সম্ভব- এ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে   তিনি বলেন, “আমি কিন্তু এখন সেই ফর্মুলাটা প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। আসলে এই ফর্মুলা প্রস্তুত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই আমি খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতে রাজি করিয়েছিলাম।”