ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আর কখনোই সিন্ধু পানিচুক্তি পুনরায় চালু করা হবে না এবং যে পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হচ্ছিল, তা দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য সরিয়ে নেওয়া হবে।
গত এপ্রিল মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরে একটি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ১৯৬০ সালের এ চুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ ‘স্থগিত’ করে। নয়াদিল্লি একে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করে। পাকিস্তান হামলার দায় অস্বীকার করলেও উভয় দেশের মধ্যে কয়েক দিনের তীব্র লড়াই হয়, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে তাদের সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক উত্তেজনা হিসেবে বিবেচিত।
গত মাসে ভারত ও পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও অমিত শাহ শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার সরকার চুক্তিটি আর কখনোই পুনরায় চালু করবে না, যা ভারতে উৎপন্ন তিনটি নদীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রের জন্য পানির প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা দেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘এটি আর কখনোই পুনরুদ্ধার হবে না। আমরা একটি খাল নির্মাণ করে যে পানি পাকিস্তানে যাচ্ছিল, তা রাজস্থানে নিয়ে আসব। পাকিস্তান অন্যায়ভাবে যে পানি পাচ্ছিল, তা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হবে।
’
চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান হিমালয় থেকে উৎসারিত সিন্ধু অববাহিকার পানি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। এতে ভারত রবি, শতদ্রু ও বিয়াস নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ পায় এবং পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি পায়। এ ছাড়া এ চুক্তির আওতায় ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু কমিশন গঠিত হয়, যা পানিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। ৬৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে বহুবার উত্তেজনা ও যুদ্ধের পরও এই চুক্তি টিকে ছিল।
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী অমিত শাহর এই মন্তব্য ইসলামাবাদের পক্ষে অদূর ভবিষ্যতে চুক্তি নিয়ে আলোচনার আশাকে ম্লান করে দিয়েছে। পাকিস্তান এখনো শাহের মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তারা আগে বলেছে, চুক্তিতে কোনো একতরফা প্রত্যাহারের বিধান নেই এবং পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীর পানি আটকে দেওয়া হলে তা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গত মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছিলেন, ‘চুক্তিটি কোনো পক্ষ একতরফাভাবে সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না, উভয়পক্ষের সম্মতি ছাড়া তা সম্ভব নয়।’
ইসলামাবাদ ইতিমধ্যে ভারতের এই ‘স্থগিতাদেশের’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এপ্রিল মাসে আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি আইনজীবী আহমের বিলাল সুফি বলেন, ‘ভারত স্থগিত বলেছে, কিন্তু চুক্তিতে এ ধরনের কোনো ধারাই নেই। এটি আন্তর্জাতিক রীতিনীতিরও লঙ্ঘন, যেখানে ওপরের দেশ নিচের দেশকে পানি সরবরাহ বন্ধ করতে পারে না।’
নয়াদিল্লিভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অনুত্তমা ব্যানার্জি তখন বলেছিলেন, ‘চুক্তিটি টিকে থাকতে পারে, তবে বর্তমান রূপে নয়। এটি হয়তো পর্যালোচনা, পুনর্বিবেচনা বা পুনর্গঠনের জন্য উত্থাপিত হবে। কারণ ভূগর্ভস্থ পানির সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো নতুন চ্যালেঞ্জগুলো চুক্তির মূল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’