কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্র করল ১০ জনের আর্জেন্টিনা

SHARE

মনে মনে হয়তো খুশিই হয়েছিল কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয় পাওয়ার। কেননা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সময় আবার আর্জেন্টিনা ১০ জনে পরিণত হয়। এনজো ফার্নান্দেজ যখন লাল কার্ড দেখলেন তখন ম্যাচের বাকি ছিল ১৯ মিনিট।
বাকি সময়টা তাই কোনো রকমে পার করলেই হয়ে যেত।

ম্যাচে ফেরাটা যখন জরুরি তখন আবার লিওনেল মেসিকেও তুলে নেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ১০ জন হয়েও ঠিকই ম্যাচে ফিরেছে আর্জেন্টিনা। ঘরের মাঠ এস্তাদিও মনুমেন্তালে থিয়াগো আলমাদার গোলে হার এড়িয়েছে তারা।
১-১ ড্রয়ে মাঠ ছাড়ার ম্যাচে শেষ মুহূর্তে ভাগ্যেকেও পাশে পেয়েছে আলবিসেলেস্তারা। অন্যথা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় রিচার্ড রিওসের হেড পোস্টে না লাগলে ম্যাচই হারতে হতো আর্জেন্টিনাকে।

সে যাই হোক আজ ম্যাচ শুরু হলে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল আর্জেন্টিনাই । সেটিই দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
তবে চতুর্থ মিনিটেই সতীর্থ থিয়াগো আলমাদার সঙ্গে দেওয়া-নেওয়া করে বক্সের মধ্যে ঢুকলেও তার নেওয়া ডান পায়ের শটটি পোস্টের অনেক দূর দিয়ে যায়। ১৪ মিনিটে কাউন্টার আক্রমণ থেকে একক প্রচেষ্টায় কলম্বিয়াকে লিড এনে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন লুইস দিয়াজ। তবে এগিয়ে যাওয়া আর হয়নি। বক্সের একটু বাইরে থেকে নেওয়া তার শট বিশ্বস্ত হাতে ধরে ফেলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস।

দুই মিনিট পরেই গোলের সবচেয়ে ভালো সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া।
এস্তাদিও মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামের আর্জেন্টিনার দর্শক একদম চুপ করে দেওয়ার। কিন্তু ডেইভার মাচাদো যে সুযোগটা মিস করলেন তার কোনো ব্যাখ্যাই যেন হয় না। বক্সের মধ্যে থেকে বাঁ পায়ের শটটি নিলেন বারের বেশ ওপর দিয়ে। অথচ, হামেস রদ্রিগেজের অবিশ্বাস্য পাসটির শটটি যদি জালে রাখতে পারতেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষককে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতো।

২২ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনাও। তবে ডি বক্সের বাইরে থেকে হুলিয়ান আলভারাজের নেওয়া বাঁ পায়ের বুলেট গতির বাঁকানো শটটা দারুণ ডান দিকে ঝাঁপ দিয়ে প্রতিহত করেন কলম্বিয়ার কেভিন মিয়ার। আর্জেন্টিনার আক্রমণের দুই মিনিট পরেই কাউন্টার আক্রমণে ঠিকই মেসিদেরসহ তাদের দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন দিয়াজ।

বাঁ প্রান্তের প্রায় মাঝ মাঠে সতীর্থ কেভিন কাসতানোর পাস ধরে একক প্রচেষ্টায় দৌড়ে আর্জেন্টিনার তিন -চার খেলোয়াড়কে ধোঁকা দিয়ে মার্তিনেসকেও ফাঁকি দেন দিয়াজ। তার বল জালে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাসে ভাসেন কলম্বিয়ার সমর্থকরা। ৩০ মিনিটে অবশ্য গোল প্রায় শোধই দিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে আলভারেজের বল জালে জড়ানোর আগেই অফসাইড ছিলেন মেসি। পরে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি হলেও সমতায় ফেরার অপেক্ষা নিয়ে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ দেওয়ার বিপরীতে আরেকটি হজম করছিলই আর্জেন্টিনা। রিচার্ড রিওসের কোণা বরাবর শটটি যদি বাঁ দিকে ঝাঁপ দিয়ে সেভ না করতেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক তাহলে বিপদটা আরো বাড়ত। অন্যদিকে গোল শোধের একদম কাছাকাছি ছিল আর্জেন্টিনাও। তবে ৬৩ মিনিটে পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি এনজো ফার্নান্দেজ। শুরুতে বাঁ দিক থেকে নিকোলাস গঞ্জালেসের বুলেট গতির শট কলম্বিয়ার গোলরক্ষক কেভিন প্রতিহত করলে বক্সের মধ্যে থাকা ফার্নান্দেজ দ্বিতীয় সুযোগ পান। সুযোগটা এতটাই দুর্দান্ত ছিল যে, গোলবারে রাখতে পারলেই হতো। কিন্তু চেলসির এই মিডফিল্ডার বল মারলেন বারের ওপর দিয়ে। এতে ম্যাচে ফেরার অপেক্ষাও বেড়ে যায়।

৬৮ মিনিটে সমতায় ফেরার আরো একটি সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির নেওয়া ফ্রি কিক প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলে ডান পোস্ট থেকে গোলবার ফাঁকা পেয়েছিলেন গঞ্জালেস। ঠাণ্ডা মাথায় জালে জড়িয়ে দিতে পারলেই হতো। কিন্তু আক্রমণেরভাগের এই খেলোয়াড় গায়ের জোরে শটটা নিলে তা বারে বাঁধা পায়।

৭১ মিনিটে আর্জেন্টিনার বিপদ আরও বাড়ে। কাসতানোর মাথায় ফার্নান্দেজ পা দিয়ে আঘাত করলে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি। এ সময় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কিও হয়। দুই দলের অধিনায়ক মেসি ও রদ্রিগেজের মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। এর কিছুক্ষণ পর দুজনকেই বদলি করান উভয় দলের কোচ।

তার আগে ১০ জনের দলে পরিণত হলেও ৭৫ মিনিটে দারুণ এক পাস দিয়েছিলেন মেসি। প্রতিপক্ষের বক্সে যদি আলভারেজের টাচটা দ্রুতগতির না হতো তাহলে সমতায়ও হয়তো ফিরতে পারত তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কঠিন সময়ে মেসিকে মাঠ থেকে তুলে নিলেও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা ঠিকই ম্যাচে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। তার ফলও পায় ৮১ মিনিটে। কলম্বিয়ার দুই খেলোয়াড়কে শরীরের নাচনে বোকা বানিয়ে বক্সের ডান প্রান্ত শট নেন আলমাদা। তার মাটি কামড়ানো শট ঠিকই জাল খুঁজে নেয়। এতে স্তব্ধ গ্যালারি সঙ্গে সঙ্গেই গর্জে ওঠে।

সমতায় ফিরলেও ৮৪ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় ছিল আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে থেকে জন অ্যারিয়াসের ডান পায়ের শট যদি মার্তিনেস তালুবন্দি না করতেন। ৮৬ মিনিটে আবার ভাগ্য পাশে না থাকলে ম্যাচই হেরে যেত আলবিসেলেস্তারা। দিয়াজের ক্রসে রিওসের হেড ডান পোস্টে না লাগলে। শেষে আর কোনো গোল না হলে সমতায় সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে।