সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলেও হারল বাংলাদেশ

SHARE

প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে হলে দারুণ কিছু করতে হতো বাংলাদেশকে। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ তা করতে পারেননি হামজা চৌধুরী ও শমিত শোমরা। ফল ঘরের মাঠে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ ব্যধানের হার।

একই ব্যবধানে সর্বশেষ দেখাতেও হেরেছিল বাংলাদেশ।
২০১৫ সালে এই ঢাকাতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। আজকের হারটা অবশ্য নাও হতে পারত। যদি ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে তারিক কাজীর নেওয়া হেডটা বারে না লাগত। বাংলাদেশি ডিফেন্ডারের হেডটা এক ইঞ্চি নিচে লাগলে জালে জড়াতে পারত।
তখন ২-১ ব্যবধানের হার নয়, ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতেন হামজা-তারিকরা।

ম্যাচ শুরুর পর ৯ মিনিটেই প্রায় গোল হজমই করে বসেছিল বাংলাদেশ। লং থ্রোতে সুযোগটা পেয়েছিলেন সং উইইয়াং।
বাংলাদেশের ডি বক্সে সতীর্থর হেড পেয়েছিলেন তিনি। তবে যথাসময়ে পা-টা লাগাতে পারেননি সিঙ্গাপুরের মিডফিল্ডার। টাইমিংয়ে গড়মিল হওয়ায় ফাঁকা পোস্টে বল না গিয়ে বারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। তাতে বাংলাদেশ রক্ষা পায়।

বাংলাদেশ প্রথম আক্রমণের সুযোগ পায় ১৫তম মিনিটে।
তবে শাকিল তপুর বাড়ানো বলে রাকিব হোসেনের দূর্বল শট তালুবন্দি করতে অসুবিধা হয়নি সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ান মাহবুদের। দুই মিনিট পরে দারুণ এক আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা শমিত শোম। তবে বক্সের মধ্যে থেকে বাড়ানো পাস রাকিবের কাছে যাওয়ার আগেই সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডার বিপদমুক্ত করেন।

২১ মিনিটে আরেকবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল সিঙ্গাপুর। কিন্তু দলটির ফরোয়ার্ড ইখসান ফান্ডি আহমদ বক্সের মধ্যে থেকে শট নিলেও বাইরে মেরে দেন। জালে রাখতে পারলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হতো বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে।

তবে ৩০ মিনিটে কঠিন চ্যালেঞ্জের ঠিকই পড়েছিলেন মিতুল। তাতে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েও দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বক্সের কাছাকাছি জায়গায় একদম ফাঁকায় বল পেয়ে ইখসান ফান্ডি বাঁ পায়ে শট নিয়েছিলেন। বাঁ প্রান্তে ঝাঁপিয়ে দারুণভাবে শটকে প্রতিহত করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। ফিরতি মিনিটে বাংলাদেশও দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল।

প্রতিপক্ষের ডি বক্সের সামনে চার খেলোয়াড়ের জটলার মধ্যে দিয়ে বল বের রাকিবের উদ্দেশে বাড়িয়েছিলেন শমিত। তবে বলের গতি থাকায় রাকিব পা লাগানোর আগেই বল তালুবন্দী করেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক। ৩৬ মিনিটে একটা ফ্রি কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে হামজা চৌধুরীর নেওয়া শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।

বাংলাদেশকে লিড এনে দেওয়ার আরেকটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফাহমিদুল। কিন্তু ৩৯ মিনিটে বাড়ানো শমিতের দারুণ পাসটাকে কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। যখন শটটা নিলেন ততক্ষণে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার এসে তাতে বাধা দেন।

তবে বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গোল হজম করেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের লং থ্রো প্রতিহত করতে পোস্ট ছেড়ে বাঁ প্রান্তের চলে যান মিতুল। পড়ে গিয়ে পরে গোলবারে পজিশন নেওয়ার আগেই ডান প্রান্ত থেকে সিঙ্গাপুরকে লিড এনে দেন উইইয়াং। সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ডের শট শেষ মুহূর্তেও বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারেননি হামজা।

যোগ করা সময়ে অবশ্য সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে কর্নার থেকে যে হেডটা নিলেন তপু বর্মণ তা প্রতিপক্ষের একজনের গায়ে লেগে গোলবারের বাইরে যায়। এই হতাশা নিয়েই পরে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতি শেষেই সিঙ্গাপুরের ডি বক্সে আক্রমণ শানিত করতে থাকে বাংলাদেশ। কয়েক মিনিটের মধ্যে দুটি আক্রমণ করলেও জালের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। তবে ঠিকই দ্বিতীয় লিড পায় সিঙ্গাপুর। ৫৯ মিনিটে হামি শাহিনের দূর থেকে নেওয়া শট মিতুল প্রতিহত করলেও তা চলে যায় সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ড ইখসান ফান্ডির কাছে। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে তা সহজেই জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

৬৩ মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন শাহরিয়ার ইমন। তবে বদলি নামা বাংলাদেশি ফরোয়ার্ডের শট তালুবন্দি করেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক মাহবুদ। ৬৭ মিনিটে অবশ্য মাহবুদ দলকে রক্ষা করতে পারেননি। হামজার পাস ধরে বাংলাদেশকে গোল এনে দেন রাকিব। তার নেওয়া শটটা অবশ্য ধরতে পারতেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক। তবে তার হাতের ফাঁক গলে জালে জড়িয়ে যায় বল।

৮২ থেকে ৮৪ মিনিটে বেশ কিছু আক্রমণ করেছিল বাংলাদেশ। তবে সমতায় ফেরার গোলটা পায়নি স্বাগতিকরা। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিলেন ফাহিম। কিন্তু বক্সের মধ্যে থেকে যে শটটা নিলেন ফাহিম তা গোলপোস্ট থেকে অনেক দূর দিয়ে। যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটেও সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে হামজার শট ডান পোস্টের বাইরের জালে যায়।

শেষ দিকে একটা পেনাল্টিও পেতে পারত বাংলাদেশ। তবে স্বাগতিক খেলোয়াড়দের আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। সিঙ্গাপুরের এক ডিফেন্ডার ফাহিমকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলে তা কর্নার দেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে আরো দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন হামজা-ফাহিমরা। শুধু গোলই পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। তাই ভালো খেলেও হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে হামজা-শমিতদের।