গত রোববার রাতের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও রাস্তা জুড়ে পানি জমে থাকায় কর্মস্থলমুখী মানুষকে তীব্র দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। বৃষ্টির পানিতে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশনের ড্রেনগুলোতেও দেখা দিয়েছে প্রতিবন্ধকতা।
সোমবার সকালে রাজধানীর কাকরাইল, রাজারবাগ, ফকিরেরপুল, পল্টন, নয়াপল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, গুলিস্তান, মগবাজার, বনানী, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। দুপুর ১২টার পর পানি কিছুটা কমতে শুরু করে।
রাস্তা জুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর অরক্ষিত ম্যানহোলগুলো হয়ে পড়েছে মরণ ফাঁদ। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দৈনিক বাংলার একটি অরক্ষিত ম্যানহোলে পড়ে আহত হন সালমা আক্তার নামে এক বৃদ্ধা। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
কাকরাইল মোড়ে দেখা গেছে পানির মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে একটি টেম্পু। টেম্পুর চালক নিজাম উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাস্তায় পানি থাকার কারণে পথের সঠিক চিত্র দেখতে পাইনি। সামনে একটি গর্ত ছিলো। গর্তেই পড়ে গাড়ি আটকে যায়। ইঞ্জিন আর সচল হচ্ছে না।’
রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার এমন চিত্র নতুন নয়। এটি খুব পুরোনো একটি সমস্যা। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীবাসীকে এমন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।’
মগবাজারের বাসিন্দা আরাফাত কাউসার বলেন, ‘ভোরে রাস্তায় গিয়ে দেখি হাঁটু পরিমাণ পানি। তাই আজ ফ্যাক্টরিতে যাওয়া হলো না। বাচ্চাদেরকেও স্কুলে পাঠাতে পারিনি।’
প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সুমাইয়া আক্তার ও তার ছোট ভাই সুজন। রাজধানীর আরামবাগের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা। ভোর আটটা থেকে মর্নিং ক্লাস চালু থাকায় সকাল সকাল প্রস্তুতি নিতে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু প্রস্তুতি শেষে বাসা থেকে বের হয়ে তারা দেখে রাস্তাজুড়ে হাঁটু পানি। এতে আর স্কুলে যাওয়া হলো না তাদের।
রাজধানীর ফকিরেরপুলের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করেন। সকাল ১০টা থেকে তার অফিস। অফিসের জন্য সব প্রস্তুতি সেরে বৃষ্টি কমার অপেক্ষায় আছেন তিনি। যথারীতি বৃষ্টি শেষ হলো। কিন্তু রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি। মাইক্রো বাসটিও এতো পানির মধ্যে চলবে না। পরে বাধ্য হয়েই আবার বাসায় ফিরে যান তিনি।
এমন চিত্র শুধু আরামবাগ কিংবা ফকিরেপুলের নয়। সোমবার সকালে এমন চিত্র দেখা গেছে পুরো রাজধানীতে।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের পানি নিষ্কাসনে অব্যবস্থাপনার কারণেই রাজধানী ঢাকার এমন অবস্থা।