একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছেন। বিশ্বকাপের আসরে খেতাব জয় হয়নি। কিন্তু ক্লাব পর্যায়ে তার স্বপ্নের দৌড় চলছেই। লিওনেল মেসি প্রতি ম্যাচেই জাদু দেখাচ্ছেন। গত নভেম্বরে লা লিগায় নতুন ইতিহাস গড়েছিলেন। টেলমো জারার ২৫১গোলের নজির ভেঙে দেন মেসি। এরপর আরও একটি নজির গড়েছেন গত মার্চে। বার্সেলোনার হয়ে নিজের ৩২তম হ্যাটট্রিক করে আরও একবার পিছনে ফেলে দিয়েছেন জারাকে। লিগের ২৪তম সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ৩৮ম্যাচে করেছেন ৪১টি গোল। এহেন সাফল্যের কারণে যারপরনাই খুশি মেসি। প্যারিস সাঁ জা’র বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে খেলতে নামার আগে সার্বিকভাবে নিজের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরলেন এক সাক্ষাৎকারে।
মাঠে এবং মাঠের বাইরে দারুণ চনমনে লাগছে আপনাকে। খেলাতেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে, কারণ কী?
মেসি: দারুণ লাগছে। গত মরসুমে যা হয়েছিলো, তারপর চলতি মরসুমের শুরুটা ভিন্নরকমভাবে হয়েছিলো। মাঠের ভিতরের নানা কারণে, নিজের চোট এবং খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে গত মরশুমটা মোটেই ভালো যায়নি। ধারাবাহিক ছিলাম না। বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে পারিনি। কিন্তু এই মরশুমে শুরুটা দারুণ হয়েছে। ভালো লাগছে। গত বছরের বেশ কিছুটা সময়ের কথা ভুলতে চাই দ্রুত। তবে গত মরশুমের নেতিবাচক বিষয়গুলি থেকেও শিক্ষা নিয়েছি। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, লাগছেও।
চলতি মরশুমে আপনার সঙ্গে নেইমার, সুয়ারেজের মতো দু’জন স্ট্রাইকার রয়েছেন, যারা গোল করার বিষয়ে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন আপনার সঙ্গে। এটা কি অনেকটা চাপ কমিয়ে দিয়েছে?
মেসি: আমি কখনোই গোল করাকে চাপ হিসেবে দেখিনি, ভালোবেসেই সেটি করে থাকি। গোল করাকে নিজের কর্তব্য হিসেবেই মনে করেছি বরাবর। পাশাপাশি বার্সেলোনায় বরাবরই দারুণ কিছু স্ট্রাইকার খেলেছেন। শুধু নেইমার বা সুয়ারেজ নয়, যারাই খেলছে তারা প্রত্যেকেই বিশ্বমানের, ক্লাবের প্রতি ওদেরও বিস্তর অবদান। সেই কারণেই তো আমি এত শান্ত থাকতে পারি!
কী ধরনের গোল করতে বেশি পছন্দ করেন আপনি?
মেসি: সত্যি বলতে গোল করার ক্ষেত্রে আমার নির্দিষ্ট কোনও পছন্দ নেই। আমি শুধু গোল করতে ভালোবাসি। দারুণভাবে সুযোগ কাজে লাগানোর আলাদা একটা তৃপ্তি রয়েছে। বক্সের বাইরে থেকে তা হতে পারে, ফ্রি-কিক থেকে গোলও পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে। আবার ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করেও হতে পারে। কীভাবে গোল হচ্ছে, তা নিয়ে আমি ভাবিত নই।
হ্যাটট্রিকের পর প্রতিবার ম্যাচের বলটি সতীর্থদের সকলকে দিয়ে সই করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। এর নেপথ্যে বিশেষ কোনো কারণ?
মেসি: আমি সবসময়ই বলটায় সই করিয়ে নিই। কারণ আমি মনে করি, এটা সমগ্র টিমের একাত্মতার চিহ্ন। আমি যে কৃতিত্ব অর্জন করেছি তা কখনওই সম্ভব হত না সতীর্থদের ছাড়া। গোলের জন্য ওদের ওপরই নির্ভর করতে হয়, তাই একটি হ্যাটট্রিক মানে আরও অনেকটা বেশি নির্ভরতার ফলাফল। তাই বলটা নিয়ে যাওয়ার আগে ওদের সকলকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া একটা বিশেষ স্মারক বলতে পারেন। আমার সমস্ত ট্রফির সঙ্গেই বলগুলো রাখা থাকে। তবে এই বলগুলির জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা করার কথা ভাবছি। এই বলগুলির গুরুত্ব অন্যরকম। তাই এই বলগুলিকেও রাখা উচিত সেই মর্যাদা দিয়ে।
নিজের সমস্ত হ্যাটট্রিক মনে আছে?
মেসি: এই মুহূর্তে বলতে পারি, না। আমাকে পুরানো গোলগুলির ভিডিও দেখতে হয়। অথবা কেউ মনে করিয়ে দিলে তবেই গোলগুলির কথা মনে পড়ে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ন্যু ক্যাম্পে ৩-৩গোলের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলাম। সেই হ্যাটট্রিক আমার কছে বিশেষ অনুভূতি বহন করে। এটাই ছিল আমার প্রথম হ্যাটট্রিক। লিগে আমাদের লড়াই জারি রেখেছিলো এই পারফরম্যান্স। যদিও শেষপর্যন্ত আমরা লিগ জিততে পারিনি। কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই হ্যাটট্রিক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ম্যাচটা ছিলো রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে।
গোল করার সময় ঠিক কী ভেবে নেন?
মেসি: আচমকাই এসব হয়ে যায়, ভাবনার অবকাশ কোথায়! শট নেওয়ার আগে ভাবার সময় থাকে খুব কম। সেই সময় যেটা সহজতম এবং দ্রুততম পথ হতে পারে, সেটাই অবলম্বন করার কথা মাথায় থাকে।
গোল বা হ্যাটট্রিকের পর কোনো প্রতিপক্ষের মন্তব্য আপনাকে তৃপ্তি দিয়েছে?
মেসি: মনে আছে, ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর রাউল আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। ও আমাকে কয়েকটা কথা বলেছিল, যা সেই সময় আমার দারুণ লেগেছিল। খুব তৃপ্তি পেয়েছিলাম। রাউলের মতো ফুটবলারের থেকে মন্তব্য শোনা, ওই ম্যাচের গুরুত্ব, সব মিলিয়ে দারুণ একটা মুহূর্ত ছিল সেটা।
দীর্ঘদিন খেলা হয়ে গেল। পিছনের দিকে তাকালে কী মনে হয়?
মেসি: খেলাধুলোর জগতে সবকিছু এত দ্রুত হয়, যে এখানে পিছনে তাকানোর সুযোগ থাকে না। আমিও তাকাই না। সবসময়ই সামনে তাকানোর, নতুন কিছু করার সুযোগ রয়েছে। শুধু ফুটবল মাঠেই নয়, জীবনে চলার ক্ষেত্রেও এই একই নীতি অনুসরণ করে থাকি।