উসকানির অভিযোগে ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে আটক করেছে ইসরায়েল

SHARE

ইসরায়েলি বিচারক মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিলেও, ইসরায়েলি পুলিশ একজন সুপরিচিত ফিলিস্তিনি নারী সাংবাদিককে জেরুজালেমে আটক রাখার চেষ্টা করছে। যদিও তাকে ‘উসকানি’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থন’ সম্পর্কিত অভিযোগে সোমবার আটক রাখা হয়েছে। আবদেল্লাতিফ এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গতকাল সোমবার জেরুজালেমের একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আবদেল্লাতিফকে হাজির করা হয়।
যেখানে একজন বিচারক জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে আরো পাঁচ দিনের জন্য আটক রাখার পুলিশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।

তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট অনুসারে লতিফেহ আবদেল্লাতিফ একজন ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক। যার কাজ রয়টার্স, এবিসি নিউজ, বিবিসি, আল জাজিরা এবং টিআরটিতে প্রকাশিত হয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, গত রবিবার জেরুজালেম জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে ‘সন্ত্রাসবাদের জন্য উসকানি এবং সমর্থনের সন্দেহে’ পুরাতন শহরে তার বাড়িতে গ্রেপ্তার করেছিলেন।
আবদেল্লাতিফের আইনজীবী এবং তার মা বলেছেন, বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অফিসাররা চিহ্নহীন যানবাহনে করে এসেছিল।

এক বিবৃতিতে পুলিশ আবদেল্লাতিফের প্রয়াত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের একটি ভিডিও পোস্ট করার দিকে ইঙ্গিত করেছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে চান।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের এবং অন্যান্য পোস্টগুলোতে স্পষ্ট যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি (আবদেল্লাতিফ) সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের প্রশংসা এবং মহিমান্বিত করছেন।’

আদালতে শুনানির পর আবদেল্লাতিফের আইনজীবী নাসের ওদেহ সিএনএনকে বলেন, ‘আদালত দেখেছেন, সাংবাদিক হিসেবে তার কাজের ভিত্তিতে এবং প্রতিরক্ষার ভিত্তিতে এই পোস্টগুলো তার পেশাগত কাজের অংশ। পোস্টগুলো ছয় মাসেরও বেশি পুরনো। তাকে আটকে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি জনসাধারণের জন্য বিপদ নয়।
’ তবে ইসরায়েলি পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তার মুক্তি স্থগিত করার জন্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে।

আইনজীবী বলেন, ‘পুলিশ কেন্দ্রীয় আদালতে আপিল জমা না দেওয়া পর্যন্ত মুক্তির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছে। বর্তমানে, আপিল প্রক্রিয়া কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত মুক্তির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।’

গত রবিবার আবদেল্লাতিফকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট সম্পর্কে তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
আবদেল্লাতিফ এর আগেও ইসরায়েলি বাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন।

২০২১ সালের মে মাসে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে একটি ছোট ছেলেকে আটকের ভিডিও করার কারণে ইসরায়েলি সেনারা তাকে মারধর করেন, মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেন এবং তার মাথার স্কার্ফ জোর করে খুলে ফেলেন।

ঘটনার সময় আবদেল্লাতিফ ইসরায়েলি বাহিনীকে একটি শিশুকে আটক করতে দেখেন বলে জানান। শিশুটির বাবা ও অন্যান্য ফিলিস্তিনিরা এতে বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আবদেল্লাতিফ তখন ঘটনাটি ভিডিও করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ইসরায়েলি সেনারা তাকে ধাক্কা দেন, যদিও তিনি তাদের স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তিনি একজন রিপোর্টার।

সেনারা তাকে উপেক্ষা করে পিছনে ঠেলে দিতে থাকে। তারপর তার হিজাব খুলে ফেলে এবং হাঁটুতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফিলিস্তিনিরা আবদেল্লাতিফকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে, ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরপর তাদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সূত্র : সিএনএন, মিডল ইস্ট আই