সিরিয়ায় আসাদ অনুগতদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত ৭০

SHARE

যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ায় সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যুত শাসক বাশার আল-আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরো কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এক্স-এর একটি পোস্টে জানিয়েছে, ‘সিরিয়ার উপকূলে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং বিলুপ্ত সরকারের সেনাবাহিনীর যোদ্ধাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও অতর্কিত হামলায় ৭০ জনেরও বেশি নিহত এবং কয়েক ডজন আহত ও বন্দি হয়েছে।’

এর আগে বলা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে উপকূলীয় শহর জাবলেহ এবং সংলগ্ন গ্রামে ৪৮ জন নিহত হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর থেকে এ ঘটনা নতুন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সহিংস আক্রমণ।
এই সপ্তাহের অস্থিরতার সময় সামগ্রিক হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

বৃহস্পতিবার আসাদের সমর্থক যোদ্ধারা ১৬ জন নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা করেছে, যখন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের ২৮ জন যোদ্ধাসহ চারজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পূর্ববর্তী লড়াইটি ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়ায় হয়েছিল, যা আসাদের আলাউইত সংখ্যালঘুদের প্রাণকেন্দ্র ছিল।

লাতাকিয়ার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুস্তাফা কেনেফাতি বলেছেন, ‘একটি সুপরিকল্পিত এবং পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণে আসাদ সরকারের বেশ কয়েকটি দল আমাদের অবস্থান এবং চেকপয়েন্টে আক্রমণ করেছে।
জাবলেহ এলাকায় টহলদারি লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। হামলার ফলে আমাদের বাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধা শহীদ এবং আহত হয়েছেন।’ তবে তিনি হতাহতের সংখ্যা উল্লেখ করেননি।

কেনেফাতি বলেছেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী তাদের উপস্থিতি নির্মূল করার জন্য কাজ করবে’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনব এবং আমাদের জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করব।’

শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

অবজারভেটরি জানিয়েছে, নিহত বেশিরভাগ নিরাপত্তা কর্মী উত্তর-পশ্চিমে ইদলিবের সাবেক বিদ্রোহী ঘাঁটি থেকে এসেছিলেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আসাদ পরিবারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি। অভিযানের সময় বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার একজন সাবেক প্রধানকে আটক এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে’।

সানা আরো জানিয়েছে, ‘জাবলেহ শহরে আমাদের বাহিনী অপরাধী জেনারেল ইব্রাহিম হুওয়েজাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
শত শত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত হুওয়েজা। ১৯৮৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন হুওয়েজা, ১৯৭৭ সালে লেবাননের ড্রুজ নেতা কামাল বেক জুম্বলাটের হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত।

প্রাদেশিক নিরাপত্তা পরিচালক বলেন, কর্তৃপক্ষ হেলিকপ্টার হামলা শুরু করার পর লাতাকিয়ার আরেকটি গ্রামে আসাদ-যুগের বিশেষ বাহিনীর কমান্ডারের অনুগত বন্দুকধারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নিরাপত্তা পরিচালক সানাকে জানিয়েছেন, ‘লাতাকিয়ার গ্রামাঞ্চলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল তারা যুদ্ধাপরাধী সুহাইল আল-হাসানের সঙ্গে যুক্ত ছিল।’

‘দ্য টাইগার’ ডাকনামে পরিচিত হাসান দেশের বিশেষ বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন এবং প্রায়শই আসাদের ‘প্রিয় সৈনিক’ হিসেবে বর্ণনা করা হত। ২০১৫ সালে আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অগ্রগতির জন্য তিনি দায়ি ছিলেন।

হেলিকপ্টার হামলা

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর আগে বেইত আনা গ্রাম এবং আশেপাশের বনাঞ্চলে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ওপর হেলিকপ্টার দিয়ে পরিচালিত হামলার খবর দিয়েছে। সানা জানিয়েছে, আসাদপন্থী মিলিশিয়ারা গ্রামের কাছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং সরঞ্জাম-এর ওপর গুলি চালিয়েছে, যার ফলে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত এবং দুজন আহত হয়েছে।

পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র সানাকে জানিয়েছে, জাবলেহ এলাকায় বিশাল সামরিক শক্তি মোতায়েন করা হচ্ছে। সানা জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী লাতাকিয়া, বন্দর শহর তারতুস এবং তৃতীয় শহর হোমসসহ আলাওয়াই-অধ্যুষিত এলাকায় রাতভর কারফিউ জারি করেছে। দেশের অন্যান্য শহরে, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থনে’ জনতা জড়ো হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আসাদ মিলিশিয়াদের অবশিষ্টাংশের সদস্যদের অতর্কিত হামলায় দুই নিরাপত্তা কর্মী নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার শহরের দাতুর পাড়ায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করে। হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা ৮ ডিসেম্বর আসাদের পতনের জন্য আক্রমণ শুরু করে।

দেশের নতুন নিরাপত্তা বাহিনী তখন থেকে আসাদের অনুগতদের তার পূর্ববর্তী ঘাঁটি নির্মূল করার জন্য ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। বাসিন্দা এবং সংস্থাগুলো এই অভিযানের সময় বাড়িঘর দখল, মৃত্যু এবং অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র: এএফপি