হুমকির অভিযোগে স্থগিত হয়েছে ‘ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব’। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের আহ্বায়ক ঠাণ্ডু রায়হান। তিনি বলেছেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে, সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রাণের নাট্যোৎসব আপাতত স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি।’
এদিকে নাট্য উৎসব স্থগিত হওয়ার পর থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
বিগত কয়েক মাস ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অস্থিরতার এবং মবের আরো একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে মতপ্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে। এবার এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করে উপদেষ্টা জানান, নাট্যকর্মীদের মধ্যেই একটা অংশ উৎসব বন্ধের জন্য আহ্বান জানায়।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফেসবুকে উপদেষ্টা ফারুকী বলেছেন, ‘নাট্য উৎসব বন্ধের খবরটা দেখে আমরা কাল সন্ধ্যা থেকেই খোঁজ-খবর নিতে শুরু করি।
কারণ সরকার শিল্পকলার মাধ্যমে সারা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিচ্ছে, গতকালও শিল্পকলায় তিনটা প্রদর্শনী হলো। আজকেও প্রাচ্যনাটের শো আছে শিল্পকলায়। তাহলে এখানে কেনো পুলিশ উৎসব বন্ধ করতে বলবে? খোঁজ নিয়ে জানলাম, পুলিশ এ রকম কিছুই বলেনি। কালকে রাতেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা কাউকে উৎসব বন্ধ করতে বলেনি।
বরং তারা নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত।’
উৎসব বাতিলের কারণ উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, ‘আমাদের দ্রুত অনুসন্ধান থেকে জানা গেল, নাট্যকর্মীদের মধ্যেই একটা অংশ এই উৎসবের বিরোধিতা করে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে হল বরাদ্দ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিক্ষুব্ধ নাট্যকর্মীদের দাবি, এই উৎসবের আড়ালে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা হত্যায় বিবৃতি দিয়ে উসকানি দেওয়া কিছু ব্যক্তি বা তাদের গোত্রীয় কিছু মানুষ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা দাবি জানায়, জুলাইয়ে তাদের ভূমিকার জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগে কোনো পুনর্বাসন চলবে না। অবশেষে কালকে মহিলা সমিতি বরাদ্দ বাতিল করে।
’
কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, ‘বিবৃতিতে তারা এসব কিছু না বলে কৌশলে প্রথমে পুলিশের কাঁধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করল। এবং বিবৃতির শেষে বলল— মবের কারণে উৎসব বাতিল করতে হলো। তারা তো জানেই কারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তাদের পরিচয় না লিখে মব বলে চালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি একটা বিশেষ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা? বা কেন ওই বিক্ষুব্ধ নাট্যকর্মীরা প্রতিবাদ করছে তারা জানে। কিন্তু সেটাও তারা বিবৃতিতে উল্লেখ না করা কি ওই বিশেষ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কি না সেটা সবাই ভেবে দেখতে পারেন। পাশাপাশি আরেকটা প্রশ্নও আসে, জুলাইয়ে তাদের ভুমিকার জন্য জাতির কাছে এখনো কি একবারও ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছে তারা?’
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় ঢাকার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে এই উৎসব উদ্বোধন এবং সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। উৎসবের তিনটি পর্যায়ে একটি করে নাটক মঞ্চস্থ করার কথা ছিল ৮৫টি নাট্যদলের। তবে হঠাৎ করেই উৎসবটি স্থগিত করা হয়। আয়োজকেরা বলেন, ‘একদল ব্যক্তির হুমকির মুখে’ আয়োজন স্থগিত করেছেন তারা।