নিজেকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। স্ব-উন্নয়নে মনোযোগী হলে ভবিষ্যতে ব্যক্তি ও কর্মজীবনে ইতিবাচক ফলাফল আসে। অনেকে দ্রুত সময়ে ক্যারিয়ারের উন্নতি করতে পারেন। কারণ তারা জানেন, প্রতিযোগিতা সব সময়ই থাকে। তাই তারা সফল হওয়ার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং জীবনে সফলতা লাভ করেন।
ব্যক্তিগত উন্নয়ন কেন প্রয়োজন?
সময়কে ব্যক্তিগত উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারলে পেশাগত দিক দিয়ে আপনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং, এডভ্যান্স ইংলিশ, যোগাযোগের মতো প্রয়োজনীয় কোর্স আপনাকে পেশাগত জীবনে অনেকের থেকে এগিয়ে রাখবে। কীভাবে আত্মউন্নয়ন করা যায় তা নিয়েই নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ‘ইনটেড এডিটোরিয়াল টিম’।
চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে আত্মউন্নয়ন করবেন।
নিয়মিত পাঠাভ্যাস
শেখার জন্য নিয়মিত পড়া সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা। নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে আপনি যে কৌশলগত জ্ঞান অর্জন করবেন তা কর্মজীবনে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। পেশা সংশ্লিষ্ট বইয়ের পাশাপাশি পড়া যেতে পারে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক বই। যা ব্যক্তির অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ ঘটায়। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য- ইতিহাস, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের রচিত প্রবন্ধ পড়া যেতে পারে। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন পড়ার জন্য সময় বের করা এবং সেটিকে অভ্যাসে পরিণত করা।
নতুন শখ তৈরি
পরিবার ও কর্মজীবনের পাশাপাশি নিজের জন্য একটু সময় বের করা জরুরি। একঘেয়েমি কাটাতে, কর্ম-জীবনের ভারসাম্য তৈরির জন্য একটি বা দুটি শখ থাকা অপরিহার্য। খেলাধুলা, কারুশিল্প কিংবা নতুন ভাষা শেখায় কিছুটা সময় বের করে নিজেকে দিতে হবে। নিজেকে দেওয়া সময়টুকু কীভাবে কাটাবেন তা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। নতুন কিছু শেখা বা নিজেকে সময় দেওয়া আত্মউন্নয়নে একটি বিশেষ দিক।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ
স্বীয় চেষ্টায় নতুন কোনো দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ বা কোনো ক্লাসের যোগদান অভিজ্ঞতার কাঠামো যোগ করতে পারে। পাঠ্যক্রম বহির্ভূত পাঠ বা কোম্পানি-স্পন্সর প্রশিক্ষণ সেশনের জন্য সাইন আপ করলে একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্যে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন সম্ভব। দেখা যাবে আপনার এই অর্জিত দক্ষতা পরবর্তী কর্মজীবনে কোনো এক সময় কাজে লেগেও যেতে পারে।
চাহিদা ও দক্ষতার সমন্বয়
পেশাজীবনে অগ্রসর হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করলে উন্নত অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট দক্ষতাগুলো শনাক্ত করে রপ্ত করে নিলে নিজেকে উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। দক্ষতার দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। যা আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সহায়তা করবে। যে পেশায় কর্মরত, তার ওপর আরও দক্ষতা অর্জন করতে সমসাময়িক প্রকাশনা পড়া, ট্রেনিং গ্রহণ, দক্ষতা অর্জন অনেকের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
নতুন সময়সূচী তৈরি
নতুন সময়সূচী তৈরি করে আপনি কীভাবে আপনার সময় ব্যবহার করেন সে সম্পর্কে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া যেতে পারে। আপনি যেভাবে আপনার দিন কাটাচ্ছেন তা পুনর্বিবেচনা করে এবং সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো চিহ্নিত করতে পারেন। এতে করে সময়কে সর্বাধিক ফলপ্রসূ করার জন্য নতুন উপায়গুলো শনাক্ত করতে সহায়তা হবে। যেমন নতুন কিছু শেখা বা বাড়তি দক্ষতা উন্নতির করার জন্য সময় আলাদা করতে, পুরো সপ্তাহে এক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করা যেতে পারে। এই বাড়তি এক ঘণ্টা কতটুকু ফল দেয় তা লিখে রাখা যেতে পারে।
শরীরচর্চার জন্য সময় বরাদ্দ
নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, কর্মক্ষেত্রে ও এর বাইরে একটি উন্নত মানের জীবনযাত্রায় অবদান রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম মন শিথিল করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন নির্দিষ্ট সময়ে শরীরচর্চা করা উচিত। জিম, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ইয়োগার মধ্য থেকে পছন্দমাফিক ধরন বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্রক্রিয়াটিকে আনন্দদায়ক করতে কাউকে ওয়ার্কআউট পার্টনার বানিয়ে নিলে ভালো। প্রতিবার যখন একটি ওয়ার্কআউট সম্পন্ন করবেন তখন নিজেকে উৎসাহিত করুন।
লক্ষ্য নির্ধারণ
একটি সাধারণ দিনে কয়েকটি ছোট লক্ষ্য থাকতে পারে। যেমন সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছানো, একটি প্রকল্প শেষ করা, পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া, একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা পর্যন্ত সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অপরদিকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আগামী ৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেটি নির্ধারণ করুন এবং লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে করণীয় কাজগুলো নির্ধারণ করে মাঠে নেমে পড়ুন।
মানসিকতায় পরিবর্তন আনা
নিজের চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। মানসিকতায় পরিবর্তন আসলে, আপনি আগে যা ভেবেছিলেন তারচেয়ে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর আপনার আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আপনি কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না তা জানা থাকলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহজ হবে।
পরামর্শদাতা খুঁজুন
যখন পথ দেখানোর জন্য একজন গাইড থাকবে, তখন স্ব-উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা করা আরও ফলপ্রসূ হবে। পেশাদার অনুপ্রেরণা বা বিশেষজ্ঞের সহায়তা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। একজন পরামর্শদাতা সবচেয়ে বড় লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
চমৎকার নেতৃত্বের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন পেশাদার হতে পারে আপনার মেন্টর। এমন একজন পরামর্শদাতাকে নির্বাচন করা প্রয়োজন, যিনি লক্ষ্যগুলো সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন।