দেশের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা চতুর্থ জয় আ.লীগের

SHARE

অপেক্ষাকৃত কম ভোটার উপস্থিতি, দু’জনের প্রাণহানি, বেশ কয়েকটি আসনে সহিংসতা আর অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে মোটাদাগে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জন আর হরতালের মধ্যে গতকাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হয়। কেন্দ্রগুলোয় কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে দিনভর আলোচনা ছিল দেশ জুড়ে। কোথাও কোথাও মাইকিং করেও ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনভর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, জাল ভোট, ব্যালট বাক্সে আগুন, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-১০ আসনের খুলশীর পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সংঘর্ষ চলাকালে এক যুবককে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ভোট শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাতিল করে। এদিন ২৮ জন প্রার্থী বিভিন্ন অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। দিনশেষে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি জনগণের বিজয়।’ আর ‘একতরফা’ এই নির্বাচনে ‘ভোট বর্জনের’ ডাক সফল হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সারা দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচন দেখে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ওআইসি, রাশিয়া, ফিলিস্তিন ও গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষকরা। নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে।

২৯৮টি আসনের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ২২৪, স্বতন্ত্র ৬০, জাতীয় পার্টি ১১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ এবং বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত একজন একটি আসনে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন।

বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬টি দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ২৯৯টি আসনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে ১ হাজার ৯৬৯ জন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৩২। বাকি ৪৩৭ জন স্বতন্ত্র। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দুই শতাধিক। সারা দেশে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ২৪টি।

ভোট শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, গুরুতর সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন আসন থেকে যে তথ্য তারা পেয়েছেন, তাতে ভোটের হার ৪০ শতাংশের মতো হতে পারে। পরিপূর্ণ তথ্য আসার পর এটা বাড়তেও পারে, নাও পারে। এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮.৫ এবং বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়ার হিসাব দিয়েছিল ইসি। সর্বশেষ বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি জানান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় ১২ কোটি ভোটার ভোট প্রদানের সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

সারা দেশে ২২টি কেন্দ্রে ভোট বাতিল করা হয়েছে বলে ইসি জানায়। এসব কেন্দ্রে পরে ভোট হবে। ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘৩০-৩৫টি জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ছোটখাটো পাল্টাপাল্টি-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও পুলিশ অফিসারের গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কোথাও ভোটকেন্দ্রের পাশে ককটেল ফোটানো হয়েছে।’

জাল ভোট দেওয়ায় বা সে কাজে সহায়তা করায় এদিন অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দণ্ডিতদের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারও আছেন। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দুজন প্রিসাইডিং অফিসার মারা যান বলে জানানো হয়।

এবারের নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে নৌকার সঙ্গে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াদের। নির্বাচনের আগেই ২৬ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। এবারও একই পথে হেঁটেছে দলটি। তবে ভোটের ফলে বিরোধী দলে এবার তারা থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবার ভোটের মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। এ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভেঙে কিছু প্রার্থীকে ভোটে আনার প্রচেষ্টাও ছিল। কিন্তু সেটি তেমন সফল হয়নি। তবে পদধারী কয়েকজন নেতা ‘তৃণমূল বিএনপি’ ও ‘বিএনএম’-এ যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা করে।