গারিসা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এখন শ্মশানের শান্তি৷ ১৩ ঘণ্টার গুলির যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে পড়ুয়াদের মৃতদেহ৷ গোনা শেষ করে এক পুলিশকর্মী জানালেন, ১৪৭ জন ছাত্রছাত্রীকে খুন করা হয়েছে এখানে৷ আহত ৭৯৷ আল-শাবাবের নারকীয় তাণ্ডবের পর কেনিয়া প্রশাসন ঘোষণা করেছে সংগঠনের প্রধান শেখ আবদিয়াসিস আবু মুসাবের ঠিকানার খোঁজ দিলে এক লক্ষ ৫৬ হাজার বৃটিশ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে৷ ভারতীয় মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ এক কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার কিছু বেশি৷
জঙ্গি নাশকতা থামার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা ছাত্রছাত্রীরা শোনাতে শুরু করেছেন ভয়াবহ গণহত্যার বর্ণনা৷ এখানকারই ছাত্র নাসের আবদুরহমান জানালেন, এক মুখোশপরা জঙ্গির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে প্রাণভিক্ষা চাইছিল তিন ছাত্রী৷ হয়তো তাদের ছেড়ে দেওয়াও হতো৷ কিন্তু তিন জনেই প্রাণভিক্ষা চাইবার সময় যিশুর নামে প্রার্থনা করেছিল৷ এই ‘অপরাধেই’ পর পর তিন জনের মাথায় গুলি করে তাদের হত্যা করে ওই আততায়ী৷ আবদুরহমান জানিয়েছেন, এই হত্যার দৃশ্যে আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীরা প্রাণের ভয়ে চিত্কার করে উঠলে তাদের দিকে ফিরে শান্ত গলায় ঘাতক জঙ্গি ঘোষণা করে, ‘আমাদের থেকে বেশি কিছু আশা করো না৷ এক এক তোমাদের সবাইকেই মারব আমরা৷’
পড়ুয়াদের একাংশ জানিয়েছেন, হামলা চালানোর আগে বেশ কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঘুরে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে গিয়েছিল জঙ্গিরা৷ আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কয়েক দিন আগেই৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নজরদারির পর হামলার ছক তৈরি হয়৷ হামলার প্রধান চক্রী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মোহাম্মদ মাহমুদকে৷ তার মাথার দাম দু’ লক্ষ ১৫ হাজার ডলার ঘোষণা করা হয়েছে৷
১৯৯৮ সালে নাইরোবির মার্কিন দূতাবাসে হামলার পর কেনিয়ার মাটিতে এতবড় জঙ্গি নাশকতা ঘটেনি৷ ১৯৯৮-র হামলায় নাইরোবিতে প্রাণহানি হয়েছিল ২১৩ জনের৷ এই ঘটনার রূপকার ছিল আল-কায়দা ও ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ৷ এর ১৫ বছর পর ফের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করে নাইরোবি৷ এবার ওয়েস্টগেট শপিং মলে ৬৭ জনকে হত্যা করে আল-শাবাব৷ দু’বছরের মধ্যেই কেনিয়া-সোমালিয়া সীমান্তবর্তী গারিসা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে নাশকতা চালায় আল-শাবাব৷