খুনিদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই উঠে না : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টায় গণভবনে সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের উপলক্ষে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে কিনা- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই উঠে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করবো। বিরোধী দল কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধী দল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করবো? খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ?
বেলজিয়ামে তিন দিনের সফরের বিষয়ে জানাতে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য দেন। এতে বেলজিয়ামের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
এ সময় একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী প্রশ্নোত্তর পর্বে জানতে চান—মঙ্গলবার পিটার হাস নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংলাপের কথা জোর দিয়ে বলেছেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? বরং সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে সংলাপ করুক। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম সুযোগ, সেটাও হারিয়েছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল, তার বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, তখন কেন বিচারের দাবি করে না। যারা সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলে, আজকে যখন এত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হল, তারা চুপ কেন?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তো মেরেছেই, এই পুলিশকে পিটিয়ে মারলো। ওগুলো মানুষের জাত নাকি? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করছে? ট্রাম্প বাইডেনের সংলাপের দিন আমরাও সংলাপ করবো। তাদের সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা বলবো নির্বাচন হবে এবং যথা সময়ে হবে। কে চোখ রাঙালো আর কে চোখ বেকালো ওটা নিয়ে আমরা পরোয়া করি না। কারণ অনেক সংগ্রাম করে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা তো সময় পেয়েছি মাত্র ১৪ বছর। শুধু যে রাজধানীর উন্নয়ন হয়েছে তা কিন্তু নয়। আপনারা ঢাকার বাইরে ঘুরে আসুন। দেখবেন কতো উন্নয়ন হয়েছে। কারণ আমরা পরিবর্তনটা তৃণমূল থেকে করেছি। কারণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি আমার তৃণমূলের মানুষের।
আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক কোনো চাপ আছে কি না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে, এটা মাথায় রাখতে হবে। কে কি চাপ দিলো, না দিলো এটাতে কিছু আসে যায় না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, মাঝখানে কিছুদিন বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি করছিল এবং আপনারা নিশ্চয়ই বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছিলেন আমাদের সরকার কিছু তাদের কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর একটা শর্ত ছিল, তারা অগ্নিসংযোগ বা ভাঙচুর করবে না।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) যখন সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল তাতে কিন্তু মানুষের একটু আস্থা-বিশ্বাসও তারা ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে বিএনপি যেসব ঘটনা ঘটালো, বিশেষ করে যেভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিকদের যেভাবে পেটালো, এ ঘটনার পর জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না।
শুধু তাই না, হাসপাতালে ঢুকেও তারা হামলা করেছে। সেখানেও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনে হাসপাতালে হামলা করছে, নারী-শিশুদের হত্যা করছে, এর সঙ্গে তো বিএনপির হামলার কোনো তফাৎ দেখি না।
এর আগে, গত ২৫-২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে’ যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী। ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ অক্টোবর ব্রাসেলসে যান। ২৭ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।