যুক্তরাষ্ট্রে গুলি : সন্দেহভাজনকে ধরতে দুই দিন ধরে অভিযান চলছে

SHARE

যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যে গুলিতে ১৮ জনকে হত্যা এবং ১৩ জন আহত করার ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরতে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চলছে। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সংরক্ষিত সেনাদের মধ্যে একজন।
পুলিশ বলছে, রবার্ট কার্ড নামের ওই ব্যক্তি সশস্ত্র এবং বিপদজনক। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে বোডোইনে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এই বাড়িটি হামলাস্থল লিউয়িসটন থেকে ২০ মিনিটের গাড়ি চালানোর পথ। এর আগের দিন রাতে লিউয়িসটনে ওই বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে তারা বেশ কয়েকটি গ্রেফতারি পরোয়ানার আওতায় তাকে খুঁজছে।
অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি বড় আওয়াজ শোনা যায় এবং পুলিশ চেঁচিয়ে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলে।
মেগাফোনের মাধ্যমে এফবিআই এজেন্ট এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহভাজনকে ‘হাত উপরে তুলে’ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ ওই স্থান থেকে চলে যায়।
কিন্তু পুলিশ ওই অভিযান কেন চালিয়েছিল তার কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। মেইনের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘পুলিশ খুব স্বাভাবিকভাবেই কার্ডের অবস্থান জানতে এবং তাকে ধরতে সম্ভাব্য সব সূত্র খতিয়ে দেখে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে।’
পুলিশের কর্নেল বলেন, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার আগে আগে ছোট শহর লিউইসটনে একটি বোলিং খেলার স্থানে গুলির ঘটনার সূত্রপাত হয়। সেখানে এক নারী এবং ছয়জন পুরুষ নিহত হয়।
এর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে কাছের শেমেনজিস বার এন্ড গ্রিল নামে একটি রেস্তোরাঁয় গুলির ঘটনা ঘটে। এতে আরও আটজন ব্যক্তি নিহত হন।
আহত ১৬ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। যাদের মধ্যে তিন জন পরে মারা যান।
এর মধ্যে লিউইসটন এবং আশেপাশের আরো তিনটি শহরে বাসিন্দাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার সতর্কতা জারি করা হয়। স্কুল এবং স্থানীয় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। শুক্রবারও এগুলো বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার কয়েক জন মানুষ কুকুরকে হাটাতে বের হওয়া ছাড়া বেশির ভাগ বাসিন্দাই বাড়িতে থেকেছেন। রাস্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মেইন রাজ্যের পুলিশকে অভিযানে সহায়তা করছে এফবিআই ও মার্কিন কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শুধু ঘটনাস্থল এবং মেইনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টারেই ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে।
সেখানকার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. জন অ্যালেক্সান্ডার এই হামলাকে এরকম ছোট একটি শহরের জন্য ‘অভূতপূর্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, হতাহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার আহ্বানে কমপক্ষে ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, বক্ষব্যাধী চিকিৎসক এবং সার্জন সাড়া দিয়েছেন।
মেইন অঙ্গরাজ্যের পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্য-জনিত সমস্যার কথা জানিয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে, ‘মেইনের দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক স্থাপনায় গুলি চালানোর হুমকি এবং এ বিষয়ে সে আওয়াজ শুনতে পেতো।’
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় অস্বাভাবিক আচরণ করার কারণে তাকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্রে গত গ্রীষ্মে ভর্তি করা হয়েছিল।

সে আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষক বলে এর আগে যে তথ্য সামনে এসেছিল তা অস্বীকার করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ‘আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত উন্নত কোন কোর্সে তার অংশগ্রহণের কোন ইঙ্গিত নেই।’
মেইনের গভর্নর জ্যানেট মিলস যিনি লিউইসটনের সাবেক বাসিন্দা তিনি এই ঘটনাকে তার রাজ্যের জন্য ‘কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। একই সাথে তিনি ‘হতাহত এবং তাদের পরিবারের জন্য পূর্ণ ন্যায়বিচারের’ আশ্বাস দিয়েছেন।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে স্থানীয় ও অঙ্গরাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এফবিআই এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিবেশী রাজ্যগুলোও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং তারা সতর্ক রয়েছে। সন্দেহভাজন আন্তঃরাজ্য সীমানা ধরে চলাচল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সন্দেহভাজনের বিষয়ে কানাডার সীমান্ত কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন রাজ্যের তুলনায় মেইনে সবচেয়ে কম হত্যাকাণ্ডের হার রয়েছে। এই অঙ্গরাজ্যের বিখ্যাত লেখক যিনি একজন ভৌতিক কাহিনীর লেখক হিসেবে পরিচিত তিনি বলেন, তার বাড়ির কাছেই এই গুলির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের পোস্টে লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার নামে এটা পাগলামি।’ তিনি অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা আইন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে শেমেনজিস বার এন্ড গ্রিল রেস্তোরাঁ লেখে, ‘কোন কারণ ছাড়াই আপনার পৃথিবী সেকেন্ডের মধ্যে উল্টে যেতে পারে। আমরা এই সম্প্রদায়ের মহান কিছু মানুষকে হারিয়েছি। এটা আমরা কিভাবে মেনে নেব?’
জাস্ট-ইন-টাইম রিক্রিয়েশন- যেখানে প্রথম গুলির ঘটনা ঘটে তারা অনলাইনের এক পোস্টে বলেছে, ‘এর কোন কিছুই বাস্তব বলে মনে হচ্ছে না, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি… এটাকে সারিয়ে তোলার মতো বা এটিকে বদলে দেয়ার মতো কোন ভাষা নেই।’
নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে হোয়াইট হাউজ ও অন্য সরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি কংগ্রেসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা আইন পাসের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি আমেরিকান যারা সাম্প্রতিক এই হামলার শারীরিক ও মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য সবচেয়ে কম এটাই করতে পারি।’
বৃহস্পতিবার মেইনের সেনেটর সুসান কলিন্স এক সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাগাজিনের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত। এই বর্বরোচিত হামলা যা ১৮টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং আরো অনেক মানুষকে আহত করেছে- সেটি মেইন রাজ্যের এখনো পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবচেয়ে খারাপ গণগুলির ঘটনা।’
খবর বিবিসি