সরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিসের লার্ভা পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক: মেয়র আতিক

SHARE

সরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হতাশার বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ে মিটিং হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হয়। একাধিকবার মিটিং হয়েছে। আমরা সবাই কিন্তু বলেছি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবো। দায়িত্ব পালন করবো। সবাই মুখে বলে, কিন্তু বাস্তবে কেউ দায়িত্ব পালন করছে না।

সোমবার (১০ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মশক নিধনে ঝটিকা অভিযানে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র ঝটিকা অভিযানে কারওয়ান বাজারে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি ভবন পরিদর্শন করেন। এসময় জাহাঙ্গীর টাওয়ার, কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা), যমুনা অয়েলের নির্মাণাধীন ভবন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের বেজমেন্টে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ। এছাড়া মেয়র ওয়াসা ভবনসহ আরও কয়েকটি ভবনের বেজমেন্ট পরিদর্শন করেন।

অভিযান পরিচালনাকালে সাংবাদিকদের মেয়র আতিকুল বলেন, বাস্তবে যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাই দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে আজকে এই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যেতো না। যে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে তা হয়তো লাগতো না, যদি তারা মাত্র ৫০০ টাকা খরচ করতো। তাদের দায়িত্ব ছিল এখানে ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া, একটু ব্লিচিং পাউডার, একটু কেরোসিন ব্যবহার করা।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটা সবাইকে নিতে হবে। দায়িত্ব কিন্তু শুধু সিটি করপোরেশনের না। এ শহর আমাদের সবার। শহরটাকে সবাইকেই ভালোবাসতে হবে। আমরা এডিস মশাবিরোধী সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মসজিদের ইমাম, খতিব, ক্যাডেট কোর, শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেসেজ দিচ্ছি। যার যার প্রতিষ্ঠানের আঙিনা যেন আমরা পরিষ্কার রাখি। সবাই যার যার প্রতিষ্ঠান, ভবন পরিষ্কার রাখলে আমরা এডিস মশা থেকে অনেকখানি রক্ষা পেতে পারি। এতে করে শহরবাসীও রক্ষা পাবেন।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত পরশু দিন (শনিবার) আমরা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাপান গার্ডেন সিটিতে অভিযান পরিচালনা করেছি, সেখানকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সেখানে ২৭টি বিল্ডিংয়ের নিচে অভিযানে দেখেছি এডিস মশার লার্ভার চাষ হচ্ছে। আজকে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে এসে দেখলাম এডিস মশার চাষ হচ্ছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে যেখানে গাড়ি রাখে, সেখানে ড্রেনে পানি। সেখানে মশার চাষ হচ্ছে।

ভবনের ভেতরে বেজমেন্ট পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করছে। কিন্তু অফিস, মার্কেট ও বাড়ির বেজমেন্ট পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ভবন মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।

এসময় ডিএনসিসি মেয়র অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। আমরা কিছুদিন ধরে দেখছি ডেঙ্গুর কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমে এ ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানতে পারছি। এখন সবার সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, সামনে ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে। আমরা গতকাল (রোববার) জরিমানা করেছি প্রায় ৯ লাখ টাকা। তার আগের দিন জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। অভিযান চলছে, চলবে। আমার অনুরোধ আপনারা জরিমানা না দিয়ে নিজ নিজ অঙ্গন পরিষ্কার রাখুন। আমরা যেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাবো সেখানেই জরিমানা করবো।

অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম শফিকুর রহমান প্রমুখ।