বাংলাদেশ-নেপাল সম্পর্ক সব ধরনের সমস্যা ও ঝুঁকিমুক্ত: রাষ্ট্রদূত

SHARE

জ্বালানি খাতসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নেপাল-বাংলাদেশের সহযোগিতা বাড়ানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন মাইলফলক তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি।

তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক সব ধরনের সমস্যা ও ঝুঁকিমুক্ত। আস্থা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও মর্যাদার মাধ্যমে এ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। করোনা মহামারিসহ কঠিন সময়গুলোতে আমরা পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছি।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) গুলশানে ‘নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শিরোনামে কসমস ফাউন্ডেশনের সংলাপে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কসমস ফাউন্ডেশনের অনারারি ইমেরিটাস অ্যাডভাইজর ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম। স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদ খান।

নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, নেপালের ৬৮৩ মেগাওয়াটের সংখুশি-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগের আলোচনা চলছে। একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি চূড়ান্ত করতে ভারতের জিএমআর কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ। নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রথমবারের মতো ত্রিপক্ষীয় আলোচনা সহজতর করতে ভারতীয় সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা উৎসাহিত হয়েছি। এটি প্রাথমিক পর্যায়ের পদক্ষেপ। কিন্তু জ্বালানির ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় এটি বড় ধরনের মাইলফলক হতে পারে।

তিনি বলেন, নেপালে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদাও বাড়ছে। বর্তমানে নেপালের জ্বালানি উদ্বৃত্ত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান আমরা যে জ্বালানি উৎপাদন করছি, তার মাত্র পাঁচ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। তার মানে, দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি সমস্যা সমাধানে নেপালের জলবিদ্যুৎ ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে ঘনশ্যাম ভান্ডারি বলেন, ১৯৭২ সালেই নেপাল-বাংলাদেশের সম্পর্কের শেকড় প্রোথিত হয়েছে। ওই বছর আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করি। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা বাংলাদেশকে নেপালের স্বীকৃতি দেওয়ার আগেও দুই দেশের মধ্যে একটি সামাজিক ও নাগরিক সম্পর্ক ছিল।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবেই আমাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। শত বছর ধরে দুই দেশের মানুষ পরস্পরের ভূখণ্ডে যাতায়াত করছে। নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদের আবিষ্কারই তার বড় প্রমাণ। আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই খাবার খাই। আমাদের ঐতিহ্য ও প্রথাও প্রায়ই একই। ভালো প্রতিবেশিত্বের ধারণা থেকেই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

নেপালের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, উন্নয়ন ও অংশিদারত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও আমাদের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা যায়। দুই দেশের জনগণের দীর্ঘ উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা থেকে আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গভীর সংযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য নেপালি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্যের একটি বাংলাদেশ। বিশেষে করে চিকিৎসাক্ষেত্রে। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে লেখাপড়া করছেন। তারা এ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন।

‘আবার বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যের একটি নেপাল। প্রতিবছর ২৫ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক নেপাল ভ্রমণ করেন। মহামারির আগে এই সংখ্যাটা আরও বেশি ছিল। সার্ক, বিমসটেক, জাতিসংঘ, নন-অ্যালাইন মুভমেন্টসহ বিভিন্ন ফোরামে নেপালকে সমর্থন করে আসছে বাংলাদেশ।’

ঘনশ্যাম ভান্ডারি বলেন, আমরা যদি দুই দেশের আগামী ৫০ বছরের সম্পর্কের দিকে তাকাই, তাহলে আমাদের অগ্রগতি বাড়াতে জোর দিতে হবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংযোগগুলো আরও জোরদার করতে নজর দেওয়া উচিত। বিশেষ করে বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়লেও তা মাঝারি পর্যায়েই রয়ে গেছে। ২০২১ সালে এটি ১০০ মিলিয়নের মতো ছিল। বর্তমানে তা ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন হবে। এই সংখ্যা বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশের পক্ষে এই বাণিজ্য খুবই নিরাপদ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব হরি শর্মা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন প্রমুখ।