দানিউব নদীর দানব

SHARE
danob fishদানিউব স্যামন আকারে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান হতে পারে এবং ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে বলকান অঞ্চলে এই মাছটির শেষ আবাসস্থল এখন বাঁধ নির্মাণের কারণে হুমকির মুখে।

“এটি খুবই দ্রুতগতির, সুঠাম, অভিজাত এবং খুবই সুন্দর” বলেন উলরিখ আইশেলমান।

শুনলে হয়তো মনে হবে তিনি কোন রেসিং কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তবে পরিবেশবাদী সংগঠন, রিভারওয়াচের এই পরিচালক বলছিলেন একটি মাছের কথা। ল্যাটিনে একে বলা হয় হুচো হুচো, জার্মানে হুচেন এবং ইংরেজিতে এটি পরিচিত দানিউব স্যামন নামে, কারণ একসময় দানিউব অববাহিকাজুড়ে এই মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো।

তবে এখন বলকান অঞ্চলই এই মাছের শেষ আশ্রয়স্থল। স্লোভেনিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর উপত্যকার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা নদী এবং জলপ্রবাহের মাঝেই এখন বসবাস করে দানিউবের এই দানবেরা।

“আমরা ইউরোপিয়ানরা এশিয়ার শেষ বন্য বাঘ নিয়ে অনেক কথা বলি এবং তাদের রক্ষার জন্য দাবি জানাই। কিন্তু আমাদের শেষ বাঘের ওপর হুমকি নিয়ে অন্ধের মতো আচরণ করি – দানিউব স্যামনই আমাদের সেই বাঘ।” স্লোভেনিয়ার সাভা নদীর পাড় দিয়ে জলাভূমির বনে ধীর পায়ে হাটতে হাটতে বলছিলেন আইশেলমান।

তার সামনে এক ব্যক্তি সাদা একটি বালতি হাতে নদীর উপরিভাগে জমে থাকা তুষার খুব সাবধানে সরাচ্ছিলেন। শীতনিদ্রা থেকে মাত্র নদীটি জেগে উঠছে। বালতির ভেতর পাঁচটি তিন বছর বয়সী নীল-সবুজ-ধুসর-সাদা-রুপালী মাছ। প্রতিটি প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা, ছোট জায়গার ভেতর এঁকেবেঁকে চলাচল করছে যেন প্রকৃতিতে মুক্তির আভাস পেয়ে নাচছে কিছু কিশোর-কিশোরী।

“এই মাছ আমাদের নদীর স্বাস্থ্যের একটি ভালো নির্দেশক” ব্যাখ্যা করছিলেন স্টিভেন ওয়েইস, অস্ট্রিয়ার গ্রাজে বসবাসরত একজন মার্কিন বিজ্ঞানী। সম্প্রতি ওয়েইসসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যেখানে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে নতুন বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক মৎস্যপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। প্রাকৃতিক জনগোষ্ঠি ধরে রাখার জন্য এই মাছগুলোর প্রচুর জায়গা, দ্রুত বহমান পরিষ্কার পানি এবং খুব নির্দিষ্ট আবাসস্থলের প্রয়োজন।

স্লোভেনিয়া মৎস্যশিকারী সমিতিকে সাথে নিয়ে পরিবেশবিদরা এখন দানিউব স্যামনকে রক্ষার জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কৃত্রিমভাবে প্রজনন করে তারা দানিউব স্যামন ছেড়ে দিচ্ছেন বলকান অঞ্চলের নদীগুলোতে।
প্রাকৃতিক পরিবেশে স্যামন কিভাবে প্রজনন করে তা ব্যাখ্যা করছিলেন ওয়েইস। নদীর তলদেশে পছন্দসই একটি জায়গা বেছে নেয় স্যামন রাণী, আর তার পাশে খুব যত্নের সাথে অবস্থান নেয় রাজা স্যামন। তারপর তারা দুজন মিলে একটি নৃত্য করতে থাকেন, আর সেই নৃত্যের তোড়ে নুড়ি পাথর সরে কিছুটা জায়গা তৈরি হয় ডিম পাড়ার জন্য। এরপরই রাজা স্যামন তার বীজ ছড়িয়ে দেয় পানির তলদেশে একটি মেঘের আকারে।

পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হলে রাণী স্যামনটি তার লেজ দিয়ে বালির একটি আস্তর তৈরি করে ডিমের ওপরে। আর প্রায় এক মাস পর জন্ম হয় নতুন মাছের, বলকানের রাজপুত্র ও রাজকন্যাদের।–বিবিসি