অনির্বাচিত সরকার কখনই ফিরে আসবে না : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা সংসদে বলেছেন, দেশে অনির্বাচিত সরকার কখনোই ফিরবে না। যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এমন সরকার আনতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যারা দেখছেন, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসবেন দয়া করে। এটা আর জীবনে হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যারা অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন দেখছেন তাদের বলব, ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ থাকলে রাজনীতিতে নামুন, ভোটারদের কাছে যান- জনগণ যাকে ভোট দেবে তারা ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনদিন হস্তক্ষেপ করবে না, করেও না। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, এটাই হলো বাস্তবতা।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সমাপনী বক্তব্য দেন বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন কোন দল আন্দোলন করছে, নির্বিঘেœ সারাদেশে সভা-সমাবেশসহ সব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। আমরা কোথাও বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আমরা বিরোধী দলে থাকতে তারা আমাদের একটি মিছিল-সমাবেশও করতে দেয়নি, বোমা মেরেছে, গ্রেনেড মেরেছে, অকথ্য নির্যাতন করেছে। কিন্তু আমাদের মাঝে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা আছে এবং আমরা সেটা দেখাচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে আর কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য। অগ্নিসন্ত্রাসীদের নিয়ে তারা (বিএনপি) সভা-সমাবেশ করে বলে আমরা আতঙ্কিত হই, তারা কখন কোথায় অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা করবে, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারবে। সেটা যেন তারা করতে না পারে সেজন্য আমাদের দল, দেশবাসী সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কেউ কিছু বলবেনা। তবে আগুন সন্ত্রাস, নাশকতা কিংবা জঙ্গিবাদের কোন চেষ্টা করা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অনির্বাচিত সরকারের দাবি উত্থাপনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে সরকার প্রধান আরও বলেন, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে যে, দুই চার ছয় মাসের জন্য দেশে অনির্বাচিত সরকার থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না! মহাভারত হয়তো অশুদ্ধ হবে না, কিন্তু সংবিধানের কী হবে? গণতান্ত্রিক ধারার কী হবে? যারা সংবিধানকে বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকার আনতে চায়- তারা কী আদৌ দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে? দেশের জনগণ ভালো থাকলে তাদের এতো কষ্ট লাগে কেন? এতো দুঃখ পায় কেন?
তিনি বলেন, দেশের মানুষকে হাড্ডিসার-কঙ্কালসার দেখিয়ে বিদেশ থেকে ভিক্ষা এনে নিজেরা বিএমডব্লিউ গাড়িতে ঘুরবে, সেটা পারছে না বলেই এসব কথা বলছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাওয়াই যাদের একমাত্র কাজ, তারাই অনির্বাচিত সরকার চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আছে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের বিপুল উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে, দেশের জনগণ তার সুফল পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরাই আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এনেছিলাম। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে বরদাস্ত করে না। ভোট চুরির অপরাধে আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে অনির্বাচিত সরকার গঠন করে জিয়াউর রহমান। তখন দেশে কী হয়েছে? একের পর ক্যু-পাল্টা ক্যু হয়েছে, শত শত সামরিক অফিসারকে হত্যা-গুম করা হয়েছে। জিয়ার পর তার পথ ধরে এরশাদও অনির্বাচিত সরকার করেছিল।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের আমলে দেশের কী কোন উন্নয়ন হয়েছে? ২৯ বছর যারা এভাবে ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের জন্য কী করেছে? একমাত্র আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন প্রথমে মহাজোট, পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
এ সময় গুজব ও অপপ্রচারে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কিছু মানুষ আছে যারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নানা অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে। তাঁর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বিভিন্ন অপপ্রচার সম্পর্কেও তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করেন।
আঁড়িপাতা নিয়ে সমালোচনার জবাবে সংসদ নেতা বলেন, যারা জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়, তারা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে কীভাবে বোমা বানাবে, কীভাবে নাশকতা চালাবে ইত্যাদি কনটেন্ট দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদেরতো মোকাবেলা করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে আঁড়িপাতায় আপত্তি কেন? আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-নাশকতা রুখতে তা করছে। আর বিশ্বের সব দেশেই এই ব্যবস্থা আছে। আর দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও তো সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে একটি মহলের নানা অপপ্রচারের জবাবে দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে আমাদের খাদ্যের কোন অভাব নেই। ভোগপণ্য আমদানী করতে এলসি খুলতেও কোন বাধা নেই। কিন্তু যারা সুযোগ নিয়ে দুই নম্বরী করে, অসুবিধা শুধু তাদের জন্য। বিদেশ থেকে রমজানে ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী আমদানী করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, তেলসহ পণ্য যথেষ্ট পরিমাণ আনা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। তবে বিদেশ থেকে আমদানী পণ্যের পরিবর্তে দেশীয় উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারে সবার এগিয়ে আসা উচিত। কারণ দেশেই এখন অধিকাংশ পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে, যাতে আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে রফতানি করতে পারি।
তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের আমলেই দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সদ্য সমাপ্ত ছয়টি উপ-নির্বাচন নিয়েতো কেউ একটি কথা বলতে পারেনি, সবখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। সরকার থেকে নির্বাচনে কোন হস্তক্ষেপ করেনি, করবেও না। কারণ আমরা জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করি, এটা অর্জন করতে আন্দোলনে বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি পর্যন্ত হয়েছি। দেশের জনগণের ভোটের অধিকারের পাশাপাশি আমরা ভাতের অধিকারও নিশ্চিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত এবং টানা গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই দেশের ব্যাপক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান হয়েছে, দেশের জনগণ এর সুফল পাচ্ছে। দেশের মানুষ এখন শান্তি ও স্বস্তিতে রয়েছে। উন্নয়নের এই গতিধারা অব্যাহত থাকবে।
সংসদ নেতা তাঁর সরকারের সকল উন্নয়ন-অর্জনগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে দেশ এগিয়ে চলেছে, এর ধারাবাহিকতায় আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।