সকাল সাড়ে এগারোটার সময় নোভোটেল হোটেলের সামনে জনা পঞ্চাশ অতুত্সাহী সমর্থকের হর্ষধ্বনির মধ্যে টিম ইন্ডিয়ার বাস যখন অকল্যান্ড রওনা হলো, তখনই হোটেলের সামনে আবিষ্কার করা গেল বাংলাদেশের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে৷ একগাল হাসি, কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য অভিনন্দন জানাতেই বলছেন, ‘মেলবোর্নে আপনাদের সঙ্গে দেখা হলে আমরাও কিন্ত্ত কম যাব না!’
শুক্রবার এই হ্যামিল্টনের সেডন পার্কেই বাংলাদেশ খেলবে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে৷ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টিম অ্যাডিলেড থেকে পৌঁছে গিয়েছে হ্যামিল্টনে৷ গ্রুপের এই শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে পারলে গ্রুপের সমীকরণ বদলাতে পারে৷ চার থেকে তিনে উঠে আসতে পারে বাংলাদেশ৷ কিন্ত্ত অস্ট্রেলিয়াকেও যেখানে হোঁচট খেতে হয়েছে, টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে শেষ আটে উঠে আসা অন্যতম আয়োজক সেই ম্যাকালামের টিমকে হ্যামিল্টনে মাশরাফি বিন মর্তুজার টিম পেড়ে ফেলবে, এই সম্ভাবনার পক্ষে বাজি ধরার লোক কম৷
টিম ম্যানেজার হিসেবে এসেছেন খালেদ মামুদ সুজন৷ ‘৯৯ বিশ্বকাপের অধিনায়ক জানাচ্ছেন, ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যাওয়ার পর টিম অনেকটাই নিশ্চিন্ত৷ ‘কোনো চাপ ছাড়াই কোয়ার্টার ফাইনালে নামবে টিম৷ ধরে নিচ্ছি, মেলবোর্নে ভারতের বিরুদ্ধেই খেলতে হবে৷ কিন্ত্ত মনে রাখতে হবে, অতীতে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছি আমরা৷’ অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী লাগছে সেঞ্চুরিকারী মাহমুদুল্লাহকে৷ অকপট স্বীকারোক্তি তার, ‘দেশবাসী খুশি হয়েছে, এত মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছি, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে?’
গ্রুপ লিগে শেষ ম্যাচ নিউ জিল্যান্ড৷ মুখে যে যাই বলুন, ওই ম্যাচ নয়, টিম এখন থেকেই ভারতকে নিয়ে ভাবছে৷ যে কারণে শুক্রবার কাফ মাসলকে বিশ্রাম দিয়ে বাইরে থাকতে পারেন মাশরাফি৷ ভারতকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট৷ তবে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি৷ মাশরাফি না খেললে টিমকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব৷
সত্যি কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপে চমকপ্রদ উত্থানের পিছনে বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টর৷
প্রথমেই আসবে মাশরাফির অধিনায়কত্ব৷ বোলার হিসেবে অনেক পরিণত এখন, কিন্ত্ত তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, গোটা টিমের মধ্যে ‘আমরাও পারি’ বিশ্বাসটা তিনি এনে দিতে পেরেছেন৷ সাকিব আল হাসান বা মুশফিকুরের জমানায় যেকোনো কারণেই হোক, বড় টুর্নামেন্টে টাইগারদের এমন টগবগে আর তরতাজা লাগেনি৷
দুই, বিশ্বকাপের আগে দেশে দু’মাস এবং তার পরে ব্রিসবেনে দু’সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প৷ যা ক্রিকেটারদের এখানকার উইকেট সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছে৷
তিন, পেস বোলিং আক্রমণ৷ মাশরাফির অভিজ্ঞতার পাশাপাশি থাকছেন রুবেল আর প্রতিশ্রুতিমান তাসকিন৷ তিন জনেই কিন্ত্ত ১৪০ প্লাস গতিতে টানা বলটা করতে পারেন৷
চার, শুধু সাকিব বা তামিম খেললে টিম জিতবে, এই মিথটাও এই বিশ্বকাপে ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা৷ সবার আগে আসবে সৌম্য সরকারের নাম৷ তিন নম্বরে নামা সৌম্য ডাকাবুকো ব্যাটিংটা করছেন৷ স্কোর ৮-২ হয়ে গেলেও চালাচ্ছেন৷ সঙ্গে থাকছেন মাহমুদুল্লাহ আর মুশফিকুর৷ বিশ্বকাপের পাঁচটা ম্যাচে চারটেতে হাফ সেঞ্চুরি আছে মুশফিকুরের৷
পাঁচ, নতুন কোচ হাতুরাসিঙ্গে যথেষ্ট খাটছেন টিমের জন্য, বিপক্ষ নিয়ে হোমওয়ার্ক আর ইনপুট তৈরিতে খুবই কার্যকরী৷
গাভাসকরের মতো ব্যক্তিত্ব কিন্ত্ত আগে থেকেই এমসিজি-র কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ভারতকে সতর্ক করছেন৷ ‘প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইংল্যান্ডের চেয়ে কঠিন হবে বাংলাদেশ৷ এই বিশ্বকাপে ওদের টিমটাকে একেবারে অন্যরকম লাগছে৷ বিশেষ করে পেস আক্রমণ নজর কাড়ার মতো৷ যে টিম ওদের হাল্কা ভাবে নেবে, তাদের ভুগতে হবে৷’
ছোট শহর হ্যামিল্টনের রাস্তায় গলিতে গলিতে এখন বাংলাদেশি মুখ৷ একে তো মিডিয়ার বিশাল টিম ঢাকা থেকে বিশ্বকাপ কভার করতে এসেছে, তার উপর প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দলে দলে অকল্যান্ড থেকে আসছেন শুক্রবারের ম্যাচে মাঠ ভরাতে৷ হ্যামিল্টনের বাংলাদেশি রেস্তোরাঁতেও চোখে পড়ছে পাশাপাশি বাংলাদেশ ও নিউ জ্যিলান্ডের পতাকা৷
চারটা দেশই কোয়ার্টার ফাইনালে, এশিয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কিন্ত্ত জয় বিশ্বকাপ!
সব্যসাচী সরকার: ভারতীয় সাংবাদিক