বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বৈদেশিক খাত উন্মুক্তকরণের ঝুঁকি মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে বোঝাপড়া বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মুলধন বহিঃপ্রবাহ জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু কোন এক দেশের মূলধন- আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, বিনিয়োগ বা যে কাঠামোতে বহিঃপ্রবাহ হোক না কেন, এক্ষেত্রে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। এসব ঝুঁকি কোন একক দেশের পক্ষে মোকাবেলা সম্ভব নয়। এর জন্য এ অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ থাকা যেমন জরুরী, তেমনিভাবে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রুপসী বাংলা হোটেলে দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘বৈদেশিক খাত উন্মুক্তকরণ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে সার্কফাইন্যান্স সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান ও চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজমী বক্তব্য দেন।
সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
গভর্নর বলেন, প্রবৃদ্ধির গতিধারা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে কিভাবে বৈদেশিক খাত উন্মুক্তকরণ সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়, এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনীতি উদারীকরণের আরো সহজ পন্থা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম তার প্রবন্ধে বলেন, মূলধনের অন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহের বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিসমূহের উন্মুক্ততা বা উদারীকরণের ক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে। উন্মুক্ততার ঝুঁকি ঠিকমতো মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে লাভের চেয়ে লোকসান হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এ জন্য এক্ষেত্রে যে কোন পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি অর্থনীতি উন্মুক্তকরণের সুবিধা নিশ্চিত করতে এ অঞ্চলের দেশসমূহের বৈদেশিক লেদেনের নীতি ও কার্যকরণের মধ্যে সুসমন্বয় গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিসমূহের উন্মুক্ততা বা উদারীকরণের অবস্থা ও মূলধন প্রবাহের উত্থান-পতন সম্পর্কিত অস্থিতিশীলতাজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সার্ক দেশসমূহের চলমান বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির গতিধারাকে এসব ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রেখে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের জন্য সম্ভাব্য নীতি অনুসন্ধান সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য।
দু’দিনব্যাপী সেমিনারে সার্কভুক্ত দেশসমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকের প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।