বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

SHARE

image_79072_0বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশী মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা৷ বলেছেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন চাইলেই এটা হতে পারে৷ বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি এখনো পর্যন্ত যেসব কথা বলেছেন, তা বাংলাদেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে৷ মোদি যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে – তা নিয়ে আশংকার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে৷ সর্বশেষ ১৬ মে-র পর ভারত থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ বিতাড়নের যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷ বিজেপি অবশ্য দীর্ঘদির ধরেই প্রচার চালিয়ে আসছে যে ভারতে দুই কোটি অবৈধ বাংলাদেশী আছে৷

এর আগে মোদি বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করেছিলেন৷ বলেছিলেন, পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বেকারত্বের মূল কারণ অবৈধ বাংলাদেশীদের অবস্থান৷ এছাড়া বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেয়ার কথা বলে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিরও চেষ্টা করেছেন তিনি৷

সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মোদি নির্বাচনে জেতার জন্য স্পষ্টতই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে উসকানিমূলক কথা বলছেন৷ যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক এবং অগ্রহণযোগ্য৷”

তিনি বলেন, “এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷” তার মতে, “মোদির বক্তব্য একটি অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, যা ভারতের নির্বাচন কমিশনের খেয়াল রাখা উচিত৷”

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতি, গোষ্ঠী বা কোনো দেশকে আক্রমণ করা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন৷ ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার এই চিত্র গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে আহত করে৷ তাই ভারতের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে মোদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷ তাকে নির্বাচনী আচরণ-বিধি মানতে বাধ্য করা৷”

তার কথায়, ‘‘শুধু পাল্টা বক্তব্য নয়, ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের উচিত সেখানকার নির্বাচন কমিশনে মোদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমেনা মহসিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মোদির এই প্রচারণা কেবল ভোট বাড়ানোর কৌশল নয়, ভারতকে আরো বেশি করে হিন্দুত্ববাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনারই অংশ৷ কেবল ধর্মীয় কারণে নয়, অর্থনৈতিক কারণেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ মোদীর এই প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হবে৷ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া মানুষদের শত্রু বিবচেনা করবে তারা৷”

তিনি বলেন, ‘‘যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা তাদের কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশীদের’ দেশ ছাড়া করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই এগোবে৷ এটাই হিন্দুত্ববাদের দর্শন৷”

অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যক্ষেক পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মোদির প্রচারণায় ভোটের জন্য যত কৌশল আছে, সবই অবলম্বন করা হচ্ছে৷ তাতে ধর্ম, প্রতিবেশী রাষ্ট্র – কিছুই বাদ দেয়া হচ্ছে না৷ তবে আশার কথা, ভারত একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ৷ সেখানকার নির্বাচন কমিশন স্বাধীন৷ ভারতের গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে৷ তাই এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়া বা প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না৷”