কোপার ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিল

SHARE

কোপা আমেরিকা ২০২১-এ রিও ডি জেনেরিওর এস্তাদিও নিল্টন সান্তোসে প্রথম সেমিফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিল মুখোমুখি হয় পেরুর। সেমিফাইনালে নেইমার জুনিয়রের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে ব্রাজিলকে ফাইনালের টিকিট এনে দেন লুকাস পাকুয়েতা।

পেরুর বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামে ব্রাজিল। ম্যাচের প্রথমার্ধের খেলাটা জমিয়েছিল সেভাবেই। দুর্দান্ত আক্রমণে ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে নেইমারের কারিকুরিতে ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়ান লুকাস পাকুয়েতা। এই এক গোলই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয় আর ব্রাজিলকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে নিয়ে যায়। যদিও ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে পেরু ফেরার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেলেসাওদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি পেরু।

ঘরের মাঠে পেরুর বিপক্ষে শুরুটা দারুণ করেছিল নেইমাররা। ম্যাচের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঠের নিয়ন্ত্রণও দারুণভাবে নিয়েছিল সেলেসাওরা। দারুণ সব আক্রমণ করলেও গোলের দেখা মিলছিল না কিছুতেই। পেরুর গোলরক্ষক পেড্রো গ্যালেসেই এদিন ব্রাজিলের আক্রমণভাগের সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিলেন। একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়ে পেরুকে ম্যাচে ধরে রেখেছিলেন এই গোলরক্ষকই। তাঁর বিশ্বস্ত হাত ব্রাজিলের বিপক্ষে করেছে মোট সাতটি সেভ, যার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৩টি আর ডি-বক্সের ভেতর থেকে করেছেন ৫টি সেভ।

৮ মিনিটের মাথায় ম্যাচে প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। পেরুর গোটা রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সের ভেতর রিচার্লিসনের উদ্দেশে দারুণ এক থ্রু বল দেন লুকাস পাকুয়েতা। রিচার্লিসন বল নিয়ন্ত্রণে এনে পেড্রোকে কাটিয়ে নেইমারের উদ্দেশে ব্যাকপাস দেন কিন্তু তাঁর পাস চলে যায় মাঠের বাইরে। এর মিনিট পাঁচেক পরে ক্যাসেমিরোর বুলেট গতির শট পেরু গোলরক্ষকের সোজা চলে যায়। কিন্তু বল ধরে রাখতে পারেননি এই গোলরক্ষক, ফিরতি বল এভারটনের কাছে গেলেও তিনি তা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি।

১৯তম মিনিটে এসে পেরু গোলরক্ষক যা দেখালেন তা যেন সাক্ষাৎ যাদু। মুহূর্তের ব্যবধানে তিনটি দুর্দান্ত সেভ দিয়ে পেরুকে ম্যাচে পিছিয়ে পড়তে দেননি। ক্যাসেমিরোর নেওয়া ফ্রি-কিক পেড্রোর বুকে লেগে হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। এরপর পাকুয়েতা আর নেইমারের যুগলবন্দিতে দারুণ এক সুযোগ তৈরি হয়। ডান দিক থেকে নেইমারের উদ্দেশে বল বাড়িয়ে দেন পাকুয়েতা আর বল পেয়ে নেইমার শট নেন কিন্তু তা ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন এই পেরুর গোলরক্ষক। এখানেই থামেননি তিনি। নেইমারের শট ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বল পান রিচার্লিসন, তিনিও জোরালো শট নিলে সেটিও রুখে দেন এই গোলরক্ষক।

প্রথমার্ধে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা ব্রাজিলের গোলের দেখা পাওয়াটা কেবল সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অপেক্ষার ফল যে সুমিষ্ট হয় তা বোঝা গেল ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে এসে। মাঠের বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে পেরুর ডি-বক্সের দিকে ঢুকে পড়ে দুই ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে ডান দিকে ক্রস করেন নেইমার। ডি-বক্সের ভেতর জায়গা করে নিয়ে বাঁ পায়ের শটে ব্রাজিলকে লিড এনে দেন পাকুয়েতা। আর প্রথমার্ধে ওই ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় সেলেসাওরা।

সেমিফাইনালের প্রথমার্ধ যেমন জমজমাট ছিল ঠিক তার বিপরীত চিত্রের দেখা মিলেছে দ্বিতীয়ার্ধে। ব্রাজিল ১-০ গোলে লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। আর তাতেই ম্যাচ কিছুটা ঝিমিয়ে যায়। পেরু নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করলেও ব্রাজিলের রক্ষণে কোনো ফাটল খুঁজে পায়নি। অন্যদিকে ব্রাজিলের রক্ষণাত্মক ফুটবলের কারণে দেখা মেলেনি আর কোনো গোলের।

দ্বিতীয়ার্ধে পেরু বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে কিন্তু থিয়াগো সিলভা ও মার্কুইনস জুটির দুর্দান্ত রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি তারা। খেলার সময় ঘণ্টার কাঁটা ছুঁতেই দারুণ এক চেষ্টা করে পেরু। দূর থেকে নেওয়া শটে এডারসনকে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন পেরুর গার্সিয়া কিন্তু বিপদ বুঝতে পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল তা রুখে দেন। এরপর মার্কুইনস পুরোপুরি বিপদমুক্ত করেন ওই সময়ে।

এর আগে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণে মনোযোগ দেয় পেরু। প্রতি আক্রমণের পথ বেছে নেয় ব্রাজিল। ৫০তম মিনিটে সমতা ফেরানোর ভালো একটা সুযোগ পায় পেরু। কিন্তু এদেরসন ছিলেন পোস্টের নিচে বিশ্বস্ত দেয়াল হয়ে। নিজেদের অর্ধ থেকে ইয়োশিমার ইয়োতুনের বাড়ানো বল ধরে ডি বক্স থেকে শট নেন জানলুকা লাপাদুলা। ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ফেরান এডারসন।

৮১তম মিনিটে সমতা ফেরানোর আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করে পেরু। ইয়োতুনের ফ্রি কিকে সবার উঁচুতে লাফিয়ে হেড করেন আলেক্সান্ডার কায়েন্স। কিন্তু বল ছিল না লক্ষ্যে। আর তাতেই রক্ষা মেলে ব্রাজিলের।

এরপর বাকি সময়ে পেরু বলের দখলে থেকে আক্রমণ করতে থাকলেও ভয় জাগানো তেমন গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত লুকাস পাকুয়েতার করা একমাত্র গোলেই ১-০ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।