আসাম সচিবালয়ের উল্টো দিকে দিসপুর গুড হেল্থ হাসপাতাল থেকে এগোলে বাঁ দিকে ছোট্ট নালার ও-পারে সরু রাস্তা। ৫০ মিটার এগোলে রাস্তা যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানে আপাত ভাবে রাজ্যের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র দিসপুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। স্কুলের সমান্তরাল রাস্তা দিয়ে একটু এগিয়ে ছোট্ট টিলায় উঠলেই হিতেশ্বর শইকিয়ার বাড়ি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যার ভাড়াটে। কিন্তু গত ২৩ বছরে ১০ মিনিটও তিনি সেখানে থাকেন নি! যদিও অন্য এক ৭ নম্বরে তিনি দশ বছর কাটালেন। তবে দিসপুরের ওই বাড়িতে গিয়েছেন মাত্র বার দুয়েক।
দিসপুরের ৭ নম্বর নন্দন নগরের বাড়িটি এবার ছাড়তে চলেছেন মনমোহন সিং। দিসপুরে সরুমটরিয়ার ছোট্ট পাহাড়ি টিলার ওপর, ওই বাড়িতে ‘ডঃ এম এম সিং’ লেখা ফলকটাও তাই উধাও!
ভারতীয় পত্রপত্রিকার খবর থেকে এ কথা জানা গেছে।
সূত্র মতে, সংসদ-সদস্য হওয়ার জন্য ১৯৯১ থেকে ওই বাড়িই ছিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভরসা। ওই ঠিকানার ‘সৌজন্যে’ ২৩ বছর আগে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। কারণ, তখনকার নিয়মে রাজ্যসভায় যেতে হলে সংশি¬ষ্ট রাজ্যের বাসিন্দা হওয়াটা ছিল আবশ্যিক শর্ত।
মনমোহন ১৯৯১ সালে নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। তখনও সাংসদ হননি। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত হয়, আসাম থেকে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য করা হবে। কিন্তু তার জন্য তাকে আসামের বাসিন্দা হতে হবে। সাহায্যে এগিয়ে আসেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়া। তাঁর বাড়িই ভাড়া নেন মনমোহন। তৈরি হয় ভাড়ার রসিদ। অসমের রেশন কার্ডও হয় মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌরের নামে।
মনমোহনের ভাড়া নেয়া সেই ঘরের দরজায় এখন তালা। সামনে ‘ডঃ এম এম সিং’ লেখা নামফলক গত বর্ষায় ভেঙে পড়েছিল। তার হদিস কেউ জানে না। ঘরে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। কেবল রয়েছে একটি গ্রন্থসাহিব।
আগে এই বাড়িরই ঠিকানা ছিল, ‘হাউস নম্বর ৩৯৮৯, নন্দন নগর, সরুমটরিয়া, দিসপুর, গুয়াহাটি, জেলা কামরূপ, আসাম’। নতুন নথিতে নম্বরটা কাকতালীয়ভাবে ৭ হয়ে গেছে ।
গত ২০০৯ সালে প্রথম বার দিসপুর স্কুলে ভোট দিয়েছিলেন মনমোহন। তবে, ভাড়া বাড়িতে যাননি। প্রশাসনের সূত্রে পাওয়া খবর, এবারেও সেই সম্ভাবনা নেই। রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, ২৪ এপ্রিল দুপুর ১টায় হেলিকপ্টারে খানাপাড়া ভেটেরিনারি ফিল্ডে পৌঁছবেন মনমোহন। তার পর গাড়িতে ৩ কিলোমিটার দূরের বুথে। এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি জানালেন, প্রধানমন্ত্রী ভোট দিতে যাওয়ার সময় ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে ভোটারদের কোনও অসুবিধা হবে না।
দিসপুর হাইস্কুলে এসপিজি পৌঁছে গিয়েছে। পুলিশের বড়কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা নজরদারি চালাবেন। স্কুল চত্বরের বাঁ দিক ঘেঁষে একতলা বাড়িতে ১৫৬ নম্বর ভোট কেন্দ্র। এখানেই ভোট দেবেন মনমোহন। সঙ্গে থাকতে পারেন তাঁর স্ত্রী।