প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকেই দেশ পরিচালিত হতো। বাবা যেভাবে নির্দেশ দিতেন, সেভাবেই দেশ চলতো। দেশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে।
আজ রোববার (৭ মার্চ) বিকেলে গণভবন থেকে ৭ মার্চ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এও জানতেন, যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা অফিসিয়ালভাবে দেবেন, সেই সময় পর্যন্ত হয়তো তিনি বেঁচে নাও থাকতে পারেন। যেজন্যই তিনি এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভেতরেই স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলে গেলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঘোষণার পর থেকেই পূর্ববঙ্গ কিভাবে চলবে, তার সব দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ঐতিহাসিক সত্য হলো সেসময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু যে ঘোষণা দিতেন, সেই ঘোষণা-নির্দেশনায় দেশ চলতো। তার নির্দেশে অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ট্রেজারি চালানও বন্ধ, সবকিছুই বন্ধ।’
বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ওই ৩২ নম্বরে। এমনকি ইয়াহিয়া খান যখন পূর্ববঙ্গে বা বাংলাদেশে, তখন কোনো বাঙালি বাবুর্চি কাজ করতে চাননি। বাধ্য হয়ে তখন প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে ফোন এসেছিল, ৩২ নম্বর থেকে একটু বলে দেওয়া হয়, যেন রান্নাঘরে বাবুর্চি একটু কাজ করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি না পৃথিবীতে আর কোথাও একরকম অসহযোগ আন্দোলন হয় কি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে তিনি সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। যে ভাষণ সারাদেশের মানুষকে জাগ্রত করতে পেরেছিল, সেই ভাষণ এক সময় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। আজ সেই ভাষণ জাতিসংঘের সেরা ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাষণ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে। এটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্য আজ উদ্ভাসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন আমার মা। যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে আমার মা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। আমার মা বলেছিলেন, তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সে কথাই বলবে। মায়ের পরামর্শেই বাবা সেদিন এ রকম ভাষণ দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই ভাষণে তিনটি স্তর পাওয়া যায়। এখানে একটি ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস। অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস। তখনকার বর্তমান অবস্থান, কিভাবে পাকিস্তান সামরিক জান্তা গুলি করে মানুষ হত্যা করছে।’
তিনি বলেন, ‘কিভাবে মানুষ যাদের ভোট দিয়েছে, তারা মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। সেই বঞ্চনার ইতিহাস, নির্যাতনের ইতিহাস বঙ্গবন্ধু বর্ণনা করছেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ভাষণের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সব নির্দেশনা তিনি দিয়ে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। ইতিহাস এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে দাবায়ে রাখা যায় না। আর বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যাবে না, এটি বঙ্গবন্ধু নিজেই ৭ মার্চের ভাষণে বলে গেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় ৭ মার্চের ভাষণ অনুবাদ করে প্রচার করা হচ্ছে। ইউনিসেফ এ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি এটি জানিয়েছে। এ ভাষণ জাতিসংঘেও স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলো, যেগুলো মুক্তিকামী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেগুলোর মধ্যে এটিও শ্রেষ্ঠ ভাষণের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বেরে করার চেষ্টা চলছে। এটিই সবচে বড় সফলতা।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রী কে এম খালিদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও সংস্কৃতি সচিব বদরুল আরেফীন। এরপর দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।