মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক জান্তা ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভমুখর দিনগুলোর মধ্যে আজ রবিবার অন্যতম। গুলি করে হত্যা, ধরপাকড় ও নানামুখী দমন-পীড়নের মধ্যেও এদিন লাখে মানুষ সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে এসেছে।
বিক্ষোভকারীদের ধরতে রাতের অন্ধকারে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে সামরিক বাহিনী। আজ রবিবার ইয়াঙ্গুনের অন্তত তিনটি জায়গায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছেন। সেখানে পুলিশ গুলি ছুড়েছে এবং আন্দোলনকারী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক মন্দিরের শহর বাগানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুড়েছে পুলিশ; তবে তারা তাজা বুলেট না রবার বুলেট ব্যবহার করছে তা পরিষ্কার হয়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
সেখান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আরও আধ ডজন শহরে বিক্ষোভ চললেও সেখানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে বলে জানা গেছে।
এদিন সবচেয়ে বেশি লোক জমায়েত হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এখানে আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহতদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করার পর অবস্থান ধর্মঘট করছেন।
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে আটক করার পর থেকে দক্ষিণপূর্ণ এশিয়ার দেশটিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ ও ধর্মঘট হচ্ছে আর তা দমনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইর একজন আন্দোলনকারী নেতা জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘তারা মানুষকে পাখির মতো হত্যা করছে। তাদের বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহ না করি আমরা তাহলে কী করব? আমরা অবশ্যই বিদ্রোহ করব।’
বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনের অন্তত তিনটি এলাকায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। রাতে সৈন্য ও পুলিশ শহরটির বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রবেশ করে গুলি ছোড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা কিয়াকতাদা এলাকা থেকে অন্তত তিন জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কী কারণে এসব গ্রেফতার তার কারণ জানেন না তারা।
সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলের কর্মী একজন আইনজীবীর খোঁজও করেছিল সৈন্যরা, কিন্তু তাকে খুঁজে পায়নি বলে ফেইসবুকে জানিয়েছেন বিলুপ্ত পার্লামেন্টের সদস্য সিথু মং।
এসব গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি রয়টার্স। মন্তব্যের অনুরোধ জানিয়ে পাঠানো বার্তারও কোনো জবাব দেননি সামরিক জান্তার একজন মুখপাত্র, জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স গোষ্ঠী জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ৭০০ জনকে গেফতার করেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ। তবে শুক্রবার দিবাগত রাতে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে সংখ্যাটি জানাতে পারেনি তারা।