ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিতে অসামঞ্জস্য, ব্যাখ্যা চেয়েছে আইন মন্ত্রণালয়

SHARE

ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালায় বড় ধরনের অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে।

খসড়া বিধিমালায় ১৬তম ও ১৭তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হলেও ১৪তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বরং তাদের পদোন্নতির জন্য অভিজ্ঞতা পাঁচ বছরের স্থলে ১০ বছর করা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির পদ অফিস সহায়ক, প্রসেস সার্ভেয়ার ও চেইনম্যান থেকে পদোন্নতি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আমলে না নেওয়ায় মাঠ প্রশাসনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য পৃথক দুটি বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০’ এবং ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা-২০২০’ নামে পৃথক দুটি বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে, যা ভেটিং-এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হয়।

ভেটিং-এ একই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্রান্ত পৃথক দুটি বিধিমালা প্রণয়ন নিয়েই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, দুটি বিধিমালা একত্রিত করে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা গেলে স্বচ্ছ ও সহজবোধ্য বিধিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।

সেখানে বেশকিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্যের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, খসড়া বিধিমালায় প্রতিটি পদের বিপরীতে পদ সংখ্যা, বেতন স্কেল ও গ্রেড উল্লেখ থাকা আবশ্যক হলেও তা করা হয়নি। ‘ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা’ থেকে কানুনগো পদে পদোন্নতির কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় ওই দুটি পদের উল্লেখ নেই।

এছাড়া বিদ্যমান বিধিমালার নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতে ৬টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। ওইসব মামলার কোনো আদেশ প্রদান করা হয়ে থাকলে তা আমলে নেওয়া হয়েছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এদিকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিব এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বিধিমালায় তহশিলদার, সহকারী তহশিলদারদের পদবি বিধি বহির্ভূতভাবে পরিবর্তন করে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা করা হয়েছে। তাদের বেতন গ্রেড যথাক্রমে ১৬তম ও ১৭তম হলেও তা ১০ম গ্রেড করা হয়েছে। তাদের কানুনগো পদে পদোন্নতির জন্য পাঁচ বছরের চাকরির যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ সার্ভেয়াররা ১৪তম গ্রেডে কর্মরত থাকার পরও কানুনগো পদে পদোন্নতিতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা আমলে নেওয়া হয়নি।

আরো বলা হয়েছে, নিয়োগ বিধিমালায় চতুর্থ শ্রেণির পদে পদোন্নতির বিধান না রেখে ১০০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ সব মন্ত্রণালয় দফতর ও অধিদপ্তরে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পদোন্নতির বিধান রয়েছে। ২০০১ সালের নিয়োগবিধিতে অফিস সহায়ক (পূর্বের পদ এমএলএসএস), প্রসেস সার্ভেয়ার ও চেইনম্যান থেকে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে ২০ শতাংশ পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও নতুন বিধিমালা শতভাগ সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অসংখ্য কর্মচারী পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন।

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিএসইবি)-এর চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির তুষার কালের কণ্ঠকে বলেন, ডিজিটাল ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন উন্ন্য়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সার্ভেয়াররা। অথচ তারা নানাভাবে বঞ্চিত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের পদসমূহে কর্মরত ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদ ও তাদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশনা দিলেও ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং (সার্ভেয়িং) ডিগ্রিধারীদের জন্য তা কার্যকর করা হয়নি। এরপর নতুন বিধিমালায় তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। সেখানে টেকনিক্যাল পদ হওয়া সত্ত্বেও সার্ভেয়ার পদের বেতন স্কেল ও সেখান থেকে কানুনগো পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে।

একইভাবে প্রস্তাবিত বিধিমালা অফিস সহায়ক, প্রসেস সার্ভেয়ার ও চেইনম্যানদের জন্য বৈষম্যমূলক হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ভূমি মাঠ প্রশাসন সরকারি কর্মচারী পদোন্নতি বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, সারা দেশে মাঠপর্যায়ে সাড়ে ১২ হাজার কর্মচারীর জন্য ২০০১ সালের নিয়োগবিধিতে ২০ শতাংশ পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হলেও নতুন বিধিতে ১০০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নতুন বিধিমালায় ৩০ শতাংশ পদোন্নতির বিধান রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালা সম্পর্কে সংক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাব ও সুপারিশ পাওয়া গেছে। আমরাও কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হবে।