আজ ৬০০ বস্তিবাসীকে ফ্ল্যাটের চাবি দেবেন প্রধানমন্ত্রী

SHARE

কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৯টি পাঁচতলা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জলবায়ু উদ্ধাস্তু ৬০০ পরিবার পাচ্ছে নতুন ফ্ল্যাট।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার ৪৪৮ পরিবার পাবে নির্মিত ফ্ল্যাট। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে ফ্ল্যাটের চাবি।
১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছাসে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা হয়। মহেশখালী কুতুবদিয়াসহ উপকূলের বিশাল এলাকা সমুদ্রে বিলিন হয়ে যায়। এতে গৃহ হারা হয় হাজার হাজার মানুষ। এসব মানুষ জীবনের তাগিদে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে বালিয়াড়ী ও ঝাউবাগান এলাকায়। যা পরবর্তী সময় কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে রুপান্তরিত হয়। যেখানে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। জলবায়ু উদ্ভাস্তু এসব মানুষ ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে আসছিল। বিশ্বমানের পর্যটন শিল্প বিকাশ ও ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হচ্ছে।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরাটেক এবং সমিতি পাড়া এলাকার বিপুল পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার। অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জমিতে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার বাস করতো। ২০১১ সালে ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে এক জনসভায় এসব জলবায়ু উদ্ভাস্তু পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেন। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রহন করা হয় খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্প। যার নাম দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প। সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রথম পেইজে ৫ তলা বিশিষ্ট ১৯টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ৬০০ পরিবার পাচ্ছে নতুন ফ্ল্যাট।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারনের কারণে ক্ষতিগস্ত যেসব জলবায়ু উদ্ধাস্তু পরিবার আছে প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প খুরুশকুল করেছেন। ৫ তলা বিশিষ্ট ১৯টি ভবন প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেখানে ৬০০ পরিবারকে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়েছে। আজ ২৩ জুলাই ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তালিকাভুক্ত ৪৪০৯ জন সকলে পর্যায়ক্রমে ফ্ল্যাট পাবে।
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পাশে নয়নাভিরাম জায়গায় এ প্রকল্পটি করা হয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জের মুখে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে জানান রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ।
তিনি বলেন, নয়নাভিরাম এই এলাকায় গড়ে উঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য শুধু মাটি ভরাটের কাজ করতে হয়েছে এক বছর। ভবনগুলো কোন ডিজাইনের হবে, কোথায় কোন ভবন গড়ে উঠবে সব কিছু আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ দেখভাল করেছেন। বিশেষ করে এই আশ্রয় প্রকল্পের কাজটি করতে গিয়ে আমাদের প্রচুর জ্ঞান অর্জন হয়েছে। এতে করে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান যদি আমাদের নির্দেশ দেন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এসব ভবন নির্মাণে আর কোন বেগ পেতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের এক জনসভায় কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় জলবায়ু উদ্ধাস্তু যেসব মানুষ অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন তাদের পূর্নবাসনের নির্দেশনা দেন। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গ্রহন করা হয় খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ৪টি জোন রয়েছে, আবাসিক জোন, পর্যটন জোন, শুঁটকি মহাল ও বাপার জোন। আবাসিক জোনে ৫ তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি ভবনে ৪হাজার ৪০৯ উদ্ভাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।’
উল্লেখ্য, দেশে এটিই প্রথম সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক বাজেটের এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমি অধিধহণ করা হয়। এ প্রকল্পে ১৩৯টি ৫ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে শেখ হাসিনা টাওয়ার নামে একটি ১০ তলা বিশিষ্ট সুউচ্ছ ভবনও থাকবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে ২০১৭ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের বাকি ভবনগুলোর কাজও এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পে বসবাসকারি পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল, মসজিদ, স্বাস্থ্য সেবার জন্য হাসপাতালসহ বিনোদনের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় পাওয়া মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।