‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে’

SHARE

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই ঘরে বসে টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে সমালোচনা করেন। তাঁরা ঘর থেকেও বের হন না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মহামারি দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই আহ্বানে যাঁরা সাড়া দিয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

তথ্যমন্ত্রী আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্য খাতে জেকেজি ও রিজেন্ট গ্রুপের অনিয়মগুলো সরকারই উদ্ঘাটন করেছে। কোনো পত্রিকার রিপোর্ট দেখে বা বিরোধী দল বলেছে এ রকম অনিয়ম হচ্ছে- সে কারণে এটি উদ্ঘাটন হয়নি উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, এখানে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি না থাকে, সে জন্য সরকারই উদঘাটন করেছে। অবশ্য আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ ব্যাপারে আরেকটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল।

শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের উদ্যোগে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১০০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা প্রদান, চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালকে কভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের উদ্বোধন ও কক্সবাজার জেলায় দুটি অ্যাম্বুল্যান্স প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম বিএমএ’র সভাপতি ডা. মুজিবুল হক, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, এস আলম গ্রুপের প্রতিনিধি আকিজ উদ্দিন প্রমুখ।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশে মানুষের ঘনত্ব পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর অন্যতম। নানা প্রতিকূলতা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার পৃথিবীর যে কয়টি হাতেগোনা দেশে সবচেয়ে কম, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

হাছান মাহমুদ বলেন, অনেকে বলতে পারেন মৃত্যুহার ইউরোপে বেশি, এই অঞ্চলে কম। এই অঞ্চলেও বাংলাদেশে মৃত্যুর হার আমাদের উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও কম। এটি সম্ভব হয়েছে নিশ্চয়ই নেতৃত্বে গতিশীলতার কারণে।

তিনি বলেন, শুরুতে চট্টগ্রামে অনেক সংকট ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে চট্টগ্রামে সেই সংকট নেই। আইসিইউ নিয়ে হাহাকার ছিল। কিন্তু এখন আইসিইউ বেড খালি পড়ে আছে। হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলার স্বল্পতা ছিল, সেটিও সরকারি-বেসরকারি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা গোছাতে সক্ষম হয়েছি।

ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। সিটি মেয়রও একটি আইসোলেশন সেন্টার খুলেছেন। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই ডাক্তার বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ চট্টগ্রামের অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সংগঠক এগিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখতে পাচ্ছি, তারা করোনাভাইরাসের কাছে কত অসহায়। তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সামর্থ্য কোনো কিছুই কাজ করছে না। আজকে বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমরা কি সমরসজ্জার জন্য বেশি ব্যয় করব নাকি এ ধরনের আরো ভাইরাস ভবিষ্যতে আসতে পারে সে জন্য আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী রিসার্চ আরো বাড়াব।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে এই ভাইরাসই শেষ ভাইরাস নয়, পৃথিবীর সমসাময়িক ইতিহাস যদি দেখি- বহু ভাইরাস এসেছে এবং অতীতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো করোনাভাইরাসের কারণে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। পৃথিবীতে যখন ১০০ কোটি জনসংখ্যা ছিল তখন পৃথিবীর পাঁচ ভাগ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে ভাইরাসের কারণে। ভবিষ্যতেও এ রকম ভাইরাস আরো আসতে পারে।

হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানে স্ত্রী স্বামীর লাশ ধরছেন না, বাবার সৎকারে ছেলে এগিয়ে আসছে না, তখন চট্টগ্রামে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাশ দাফন ও সৎকারে এগিয়ে এসেছে। আমার নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের লাশ নয়, হিন্দু-বৌদ্ধসহ সবার লাশ তারা সৎকার করছে। যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে, তাদেরও ধন্যবাদ জানান তথ্যমন্ত্রী।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ একজন প্রচারবিমুখ মানুষ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সব সময় মানুষকে সহায়তা করেন, কিন্তু প্রচার করেন না তিনি। তাঁর এই উদ্যোগ নিয়ে আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আমি তাঁকে বরং পরামর্শ দিয়েছিলাম, এসব কাজ প্রচার করতে, যাতে অন্যরা উৎসাহিত হয় ও এগিয়ে আসে।

হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই এগিয়ে এসেছে, আরো অনেকেই এগিয়ে আসার কথা ছিল। আশা করি তারাও এগিয়ে আসবে, যারা এখনো হাত প্রসারিত করেনি, তারাও হাত প্রসারিত করবে। তাহলে আমরা সম্মিলিতভাবে এই সংকট মোকাবেলা করতে পারব।