তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপরে

SHARE

তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টায় তিস্তার নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের এ রেকর্ড পরিমাপ করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রাতে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর তীরের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়।

জানা গেছে, তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলের মাত্রা বেড়ে যায়। তা অব্যাহত থেকে রবিবার রাত ১২টায় আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ব্যারেজ রক্ষার্থে ফ্লাড বাইপাসের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে তিস্তা পাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অধিবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং শুরু করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এদিকে রাতে পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাসের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ফ্লাড বাইপাসের ভাটিতে থাকা মানুষজনকে অন্যত্র সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটলেও কেউ কেউ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সতর্কতাকে অবজ্ঞা করে ঘরেই মাচাং বানিয়ে থাকছে।

টানা ৩ দিনের বন্যায় তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা ঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ দিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। চৌকি/খাটের ওপর মাচাং বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। কেউ কেউ ঘর বাড়ি ছেড়ে উচু বাঁধ বা পাশ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। নিদারুণ বিপাকে পড়েছে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশুপাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দী পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল বলেন, তিস্তার পানি শুক্রবার দুপুর থেকে বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার রাত ১২টায় বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরও বৃদ্ধি পেলে ফ্লাড বাইপাসের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তাই ভাটিতে থাকা জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এর পরও যদি কেউ থেকে যায় তার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নেবেন না।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তা নদী বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ফ্লাড বাইপাস কেটে দেয়া হবে না। তবে অভার ফ্লো হতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। পাউবো রেড অ্যালার্ট জারি করেছে শুনেছি। তবে জনগণকে নিরাপদ স্থলে সরিয়ে নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসনের সহায়তা চাইলে তা করা হবে।