ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন আসামিরা

SHARE

বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় যে সকল আসামি বা আসামিরা পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে ফেরারি জীবনে ছিলেন বা আত্মগোপনে ছিলেন সেসব আসামি এখন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। এই আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে এ বিষয়ে আজ শনিবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি শর্তানুযায়ী, আদালত কক্ষে একজন আসামির পক্ষে সর্বোচ্চ দুজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন। এ সময় আদালতে সর্বোচ্চ ৬ জনের বেশি লোক থাকতে পারবে না। আর মামলায় একাধিক আসামি হলে সেক্ষেত্রে ৫ জনের বেশি আসামি কাঠগড়ায় দাঁড়াতে পারবেন না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় গত ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে আসামির জামিনের আবেদনের ওপর শুনানির ব্যবস্থা করা হলেও পলাতক আসামির আত্মসমপর্ণের কোনো সুযোগ ছিল না। এ বিষয়ে আইনজীবীদের অব্যাহত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট আসামির আত্মসমর্পণের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করল।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জারি করা ৯ দফা নিদের্শনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিগণের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে ওই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞ চিফ ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় কার্য পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

২। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ আবেদন দাখিল এবং শুনানি কার্যক্রমের পদ্ধতি ও সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ ও সমন্বয় করতে হবে যাতে আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালত ভবনে কোনোরূপ জনসমাগম না ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে প্রত্যেককে কমপক্ষে ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল প্রকার জনসমাগম পরিহার করতে হবে।

৩. বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ এবং আদালত ভবনে জনসমাগম এড়াতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক আত্মসমার্পণ দরখাস্ত শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন। বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ সংক্রান্ত একটি তালিকা সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি আদালত এবং আইনজীবী সমিতির নোটিশ বোর্ডে প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।

৪. একটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সর্বোচ্চ দুজন আইনজীবী শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এজলাস কক্ষে একত্রে ছয়জনের অধিক লোকের সমাগম করা যাবে না। তবে একই মামলায় একাধিক আত্মসমর্পণকারী অভিযুক্ত ব্যক্তি থাকলে এজলাস কক্ষের ডকে সর্বোচ্চ পাঁচজন অভিযুক্ত ব্যক্তি অবস্থান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট উক্তরূপ মামলা একাধিক ভাগে/সেশনে শুনানি করতে পারবেন এবং সম্পূর্ণ শুনানি সম্পন্ন করে আইনানুগ আদেশ প্রদান করবেন। মামলা শুনানির সময়ে এজলাস কক্ষের বাইরে আদালতের বারান্দায় বা করিডরে জনসমাগম সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।

৫. আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানির সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী ব্যতীত অন্য কোনো আইনজীবী পক্ষে অবস্থান করবেন না। একটি আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা কক্ষ ত্যাগ করার পর ম্যাজিস্ট্রেট পরবর্তী আত্মসমর্পণের দরখাস্ত শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন।

৬. এজলাস কক্ষে প্রত্যেককে আবশ্যিকভাবে মুখাবরণ (ফেস মাস্ক) পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে। আদালতে প্রবেশের সময় প্রত্যেক ব্যক্তির তাপমাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে নিশ্চিত করনার্থে তাৎক্ষণিক উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনবোধে আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানি করা হতে বিরত থাকা সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

৭. আদালতের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনাক্রমে বর্ণিত বিষয়ে পূর্ণ সহায়তার জন্য আইনজীবীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা গেল।

৮. বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বর্ণিত মতে স্বাস্থ্যবিধি সহ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ নিশ্চিতকরণের নিয়মাবলী প্রতিপালন সার্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের [email protected] ইমেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করবেন।

৯. এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ প্রদান না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।