দেশের নিঃস্বার্থ একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা হারালাম : মতিয়া চৌধুরী

SHARE

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, আজকে তার অকালমৃত্যু হলো। আমি অকালমৃত্যুই বলব, কারণ আমাদের সামনে নাসিমরা যখন চলে যায়, এটাকে আমরা অকালমৃত্যুই বলব।
তিনি বলেন, দেশের নিঃস্বার্থ একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা এবং মাঠের কর্মী ছিল সে, তাকে হারালাম। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’
শনিবার (১৩ জুন) সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের (তার বাবা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।) বিয়োগান্তক ঘটনায় সে (নাসিম) মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। সে পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে রাজনীতিতে তার বাবার ধারা এবং দেশের জন্য কাজ করা, সেটা সে প্রমাণ করেছে। সে ছিল অবিচল, বিশ্বস্ত এবং দেশের জন্য কাজ করে গেছে। গণমানুষের জন্য কাজ করে গেছে।
মতিয়া চৌধুরীবলেন, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে জেল-জুলুম, নির্যাতন হাসিমুখে বরণ করে গেছে। অনেকেই ঝামেলাহীন জীবনযাপন করেছে, কিন্তু নাসিমসেটা করেনি। নাসিম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ১৪ দল… আমরা ১৪ দলের সঙ্গে আছি, কিন্তু ১৪ দলের সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সব সময় জড়িত থেকে সবাইকে এক জায়গায় এনে কাজ করানোটা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করেছে। কারণ, এখানে নানা মত নানা পথের লোকজন আছে, যদিও সবাই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, কিন্তু আলাদা পার্টির। সুতরাং সবাইকে এক জায়গায় করার ক্ষেত্রে নাসিমের অবদান ছিল অসীম, যা সে করে গেছে সফলতার সঙ্গে।
প্রসঙ্গত, শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম সংসদে পঞ্চমবারের মতো সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এবার মন্ত্রিত্ব না পেলেও দলের সভাপতিমণ্ডলীতে থাকার পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন নাসিম।
গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। সফল অস্ত্রোপচার হলেও তার মাথার ভেতরে বেশ কিছু রক্ত জমাট বেধে ছিল। স্ট্রোকের পর থেকে গত ৮ দিন তিনি অচেতন অবস্থায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টেই ছিলেন।
এরই মধ্যে পরপর দুইবার করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট আসলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে সঙ্কটাপন্ন অবস্থার কারণে মোহাম্মদ নাসিমকে দেশের বাইরে স্থানান্তরের ঝুঁকি নিতে চাননি তার পরিবারের সদস্যরা।