রেমিট্যান্স আহরণের নতুন রেকর্ড

SHARE

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বলতে গেলে স্থবির। এর মধ্যেই সুখবর দিল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থনীতির চরম সংকটের মধ্যেও রেমিট্যান্স আহরণে নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার ২০ দিন আগেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১০ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে কোনো এক অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আর আসেনি। অর্থাৎ অর্থবছর (২০১৯-২০২০) শেষ হওয়ার ২০ দিন আগেই রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। আর জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে এসেছে ৭০ কোটি ডলার। সব মিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিলে জমা হয়েছে ১ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার। এর আগে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল।
এই সফলতার পেছনে কাজ করেছে সরকারের প্রণোদনা ঘোষণা। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এর পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।
তবে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে দুই মাস (মার্চ ও এপ্রিল) রেমিট্যান্সের প্রভাব কমে যায়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ঈদের মাস মে-তে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে য়ায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। সে সময় রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এর পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
এদিকে চলতি অর্থবছরের মতো রেমিট্যান্স বাড়াতে আগামী অর্থবছরও এ খাতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং ওই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকার কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় লিখিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখের অধিক অভিবাসী কর্মী কর্মরত। গত ১০ বছরে পেশাজীবী, দক্ষ, আধাদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ ক্যাটাগরিতে মোট ৬৬ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে, যা এ পর্যন্ত মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ৭ লাখের বেশি মানুষের বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।