করোনা রুখতে কৃত্রিম অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা

SHARE

বিশ্বজুড়ে প্রলয় সৃষ্টি করেছে আণুবীক্ষণিক জীব নভেল করোনাভাইরাস। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে মানবজাতির সভ্যতা ও বিজ্ঞানের দম্ভ। কোন ওষুধ নেই, প্রতিষেধক নেই। শুধুই মৃত্যুর অপেক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে লেগেছেন একটা ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরিতে। এখনও সফলার মুখ দেখেননি।

অবশেষে আশার বাণী শুনিয়েছেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা। বলছেন, পরীক্ষাগারে তারা এমন একটি কৃত্রিক ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যেটা নভেল করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করতে সক্ষম। কভিড-১৯ চিকিৎসা ও মহামারিটির বিস্তার রোধে এটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

জার্মান গবেষক দল বলছেন, তাঁরা একটি কৃত্রিম অ্যান্টিবডি পেয়েছেন যা সার্স করোনভাইরাস-২ কে ব্লক করে এবং এইকভাবে সংক্রমণ রোধ করে। কৃত্রিম এই অ্যান্টিবডি কভিড-১৯ রোগের গুরুতর ফর্মগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত এবং একই সাথে এটা ভাইরাসের বিস্তারও প্রতিরোধ করে। তবে, এটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ এবং কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণা দরকার।

১৮৯০ সালে জার্মান গবেষক এমিল ফন বেহরিং-এর পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে আধুনিক ইমিউনোলজির যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, সংক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া জীবিত প্রাণীদের রক্ত অন্যান্য জীবের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে একই জাতীয় সংক্রমণ দমন করা যেতে পারে। তবে প্রযুক্তিগত দুর্বলতায় এই সেরোথেরাপির পেছনের প্রক্রিয়াটি তখন জানা ছিল না। শরীরে এই রক্ত কিভাবে কাজ করে সেই উৎসও পরিষ্কার করা হয়নি।

তার সেই ফর্মূলাকে গবেষণা করেই আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরা ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি করছেন। এখন এটি জানা যায় যে, প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির তথাকথিত বি-কোষগুলো শরীরে কোনো রোগজীবাণু সনাক্ত করার পরে তাদের ম্যাসেজ করে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি ভাইরাসগুলোকে কার্যকরভাবে অবরুদ্ধ করে এবং নতুন কোষে প্রবেশ করার ক্ষমতা ব্লক করে দেয়। ফলে ভাইরাসটি নতুন কোষে প্রবেশ করতে পারে না এবং বংশ বৃদ্ধিও করতে পারে না।

নতুন আবিষ্কৃত এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে অবরুদ্ধ করে এবং ভাইরাসগুলোর বিস্তারকে সীমাবদ্ধ করে। ফলে রোগীর উপসর্গগুলো দ্রুত কমতে থাকে। এই প্যাটার্ন অনুসারে যে চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করে তাকে বলে ইমিউনোথেরাপি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডস এবং এখন জার্মানি থেকে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সুসংবাদ প্রকাশিত হয়েছে – যেসব অ্যান্টিবডিগুলো সার্স-কোভি -২ কে আটকে দিয়ে নতুন কোষে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পেরেছে। ফলে চিকিৎসায় এটা নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কারটির প্রধান নেতা আলফার্ট র‍্যান্ডের সাথে কথা বলেছে স্পুটনিক নিউজ। যিনি জার্মানির হেলমহোল্টজ সেন্টার ফর ইনফেকশন রিসার্চের অন্যতম গবেষক। গবেষণাগারে তিনিই পরীক্ষাগুলো চালিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল যেগুলো ভাইরাসকে নিরপেক্ষ করে তাদের সন্ধান করা। বায়োটেকনোলজি সংস্থা ইউমাব এবং ব্র্যাঙ্কশুইগের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি গবেষণা টিমের জন্য প্রায় ৬ হাজার এর মতো অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিল। সেখান থেকে পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে অকেজো করতে পারে এমন আ্যান্টিবডি বাছাই করা হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের সাহায্যেই ভাইরাস নতুন কোষে প্রবেশ করে।’

তিনি আরো বলেন, এই অ্যান্টিবডি এমনভাবে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে আবদ্ধ করে যে এটি পরবর্তীকালেও নতুন কোন কোষে প্রবেশ করতে পারে না। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই অ্যান্টিবডি মূলত কয়েকটি অ্যান্টিবডির মিলিত ককটেলে তৈরি হয়েছে।

সূত্র- স্পুটনিক।