লকডাউন কাজ করছে না, ‘ইমিউনিটি’ ছাড়া পথ নেই

SHARE

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশ হাজারের ওপর। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৮৮, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হওয়া রোগী।
বাংলাদেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির প্যার্টান বা আক্রান্তের সংখ্যা নির্দেশকারী গ্রাফে এর ওঠানামার চিত্রটা দেখলে দেখা যাবে, বিশে এপ্রিল ৪৯২জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। তারপর দৈনিক আক্রান্তের এই হার ওঠানামা করে এখন ৬শ’য়ের কোঠায় পৌঁছেছে।
মাঝে এই সংখ্যা ৫০০র ঘরে ছিল, এখন তা ছয়শ’র ঘরে এসে গেছে। দিনে দিনে এই কার্ভটা (গ্রাফে আক্রান্তের রেখাচিত্র) উঠে যাচ্ছে। সমস্ত ইনফেকটেড লোকের ৫৫% ঢাকা সিটিতে। আর সব আক্রান্তের ৮৭% ঢাকা বিভাগে।
তিনি বলছেন, বিশেষ করে ঢাকায় সংক্রমণের বিষয়টা ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেই তার মনে হচ্ছে। ইনফেকশনটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে, সেটা যে সহসা কমবে তার কোন (লক্ষণ) নেই, বলছেন অধ্যাপক ইসলাম।
তিনি বলছেন, গত ২৮শে এপ্রিল গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে এবং এর কী প্রভাব পড়বে তা আমরা পাওয়া শুরু করব ১২ই মে থেকে।
দোকানপাটও এতদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেবার যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, অধ্যাপক ইসলাম মনে করছেন তার প্রভাবে এই গ্রাফ আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশের মানুষও গভীর উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছে কবে তারা এই শঙ্কা-মুক্ত হবে।
অধ্যাপক ইসলাম মনে করছেন এই সংক্রমণ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে হার্ড ইমিউনিটি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। হার্ড ইমিউনিটি- অর্থাৎ কিছু লোক মারা যাবে, এবং অনেক মানুষ ইমিউন (প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাস প্রতিরোধী) হয়ে যাবে।
মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলে তবেই এই ভাইরাস থেকে ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা চলে যাবে বলে তিনি মনে করছেন। তবে এখানে সতর্ক হবার কারণও রয়েছে বলে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
এই ভাইরাস যদি এর মধ্যে মিউটেট করে (আচরণ পরিবর্তন করে), তাহলে কিন্তু তা নাও হতে পারে। কারণ মিউটেট করলে সেটা নতুন ভাইরাসে পরিণত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট যেটা আমরা এখন করছি, সেটাও আবার তখন কাজে লাগবে কি না তাও জানা নেই, ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক ইসলাম।
লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেবার একটা প্রভাব ফেলতে পারে সংক্রমণের হারের ওপর – মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার মানে হল কৃত্রিম উপায়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। তবে কেউ যদি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে তার শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে, বলছেন তিনি।
তার মতে, এই ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির ওপর ভরসা করেই থাকতে হবে। কারণ তিনি বলছেন বাংলাদেশে উচ্চ মানের লকডাউন আরোপ করা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা তো করলাম এক মাস ধরে। পারছি না তো। সবাই চেষ্টা করেছে। পুলিশ চেষ্টা করেছে, আর্মি চেষ্টা করেছে, ভলান্টিয়াররা চেষ্টা করেছে। আমরা পারছি না।
তিনি বলছেন বাংলাদেশে এই রোগ মোকাবেলার একমাত্র উপায় যে মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি তৈরি হওয়া, সরকারকে সেটা মানতে হয়ত বাধ্য হতে হবে। অধ্যাপক ইসলাম বলেন আমেরিকা বা ইতালিতে কর্তৃপক্ষ যেভাবে লকডাউন কার্যকর করতে পারে, বাংলাদেশ সেভাবে এই লকডাউন কার্যকর করতে পারছে না।
এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি