ভারতে সংক্রমণ ঠেকাতে মোবাইল অ্যাপ নিয়ে বিতর্ক

SHARE

ভারতে করোনাভাইরাস মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
‘আরোগ্য সেতু’ নামে ওই অ্যাপটির ডাউনলোড ও ব্যবহার সব সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য কেন্দ্র গতকালই বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে।
আর এর পরই বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন এই অ্যাপটি একটি ‘আধুনিক নজরদারির সিস্টেম’ ছাড়া কিছুই নয়।
এর আগেও ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন-সহ একাধিক সংস্থা এই অ্যাপটি কতখানি সুরক্ষিত, সে প্রশ্ন তুলেছিল।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নস্যাৎ করে শাসক দল বিজেপি অবশ্য বলছে, তিনি অযথা মিথ্যা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় ভারত সরকার গত মাসের গোড়ার দিকে আরোগ্য সেতু নামে এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি লঞ্চ করেছিল- যা এর মধ্যেই দেশের ৫ কোটিরও বেশি মানুষ ডাউনলোড করেছেন।
ভারতের ১১টি ভাষায় ব্যবহারযোগ্য এই অ্যাপটি একজনকে বলে দেয়, তার আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো কোভিড-আক্রান্ত রোগী আছেন কি না- অথবা তার শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকরা ঠিক কী ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
ভারতে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস সেন্টারের মহাপরিচালক ড. নীতা ভার্মার কথায়, ‘মূলত এই অ্যাপটি ভারতের নাগরিকদের নিজেদেরই একটা মূল্যায়ণ করার সুযোগ দিচ্ছে যে তাদের করোনাবাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ঠিক কতটা। এর জন্য অ্যাপে তাদের কতগুলো প্রশ্ন করা হয়, তার উত্তরের ভিত্তিতে তাকে অ্যাসেস করা হয়, তার উপসর্গগুলো দেখা হয়, তার ভ্রমণের ইতিহাস দেখা হয় ইত্যাদি।’
গতকাল ভারত সরকার জানায়, তৃতীয় দফায় দেশে লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ার পর যে কর্মচারীরা সোমবার থেকে কাজে যোগ দেবেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
এর পরই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেন- এই অ্যাপটি একটি ‘সফিস্টিকেটেড সার্ভেইলেন্স সিস্টেম’, যা বেসরকারি সংস্থার কাছে আউটসোর্স করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মহামারীর ভয় দেখিয়ে নাগরিকদের সম্মতি ছাড়াই তাদের ওপর এখানে নজরদারি চালানো হচ্ছে, ট্র্যাক করা হচ্ছে।
কংগ্রেসের সাইবার সেলের চেযারম্যান রোহন গুপ্তা জানান, এ অ্যাপে ক্লজ সিক্সে পরিষ্কার লেখা আছে, যদি আপনার তথ্য অনধিকৃতভাবে ব্যবহৃত হয়, সরকার তার জন্য দায়ী থাকবে না। আরে, আমরা অ্যাপের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু আপনাকে তো উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার করতে হবে?
তিনি বলেন, ‘সরকারকে তো জানাতে হবে এই আরোগ্য সেতু কীসের সঙ্গে সংযুক্ত, এই ডেটা সরকারের কোন বিভাগ ব্যবহার করতে পারবে, এটা স্বল্পমেয়াদি না কি দীর্ঘমেয়াদি অ্যাপ, না কি শুধু করোনার জন্যই – যে প্রশ্নগুলোর কোনও উত্তর নেই!’
ভারতে যেহেতু কোনো উপযুক্ত ডেটা প্রোটেকশন বা তথ্য সুরক্ষা আইন নেই, তাই এই ধরনের অ্যাপে নাগরিকদের তথ্য আদৌ কতটা নিরাপদ থাকবে গত কয়েক সপ্তাহে অনেক এনজিও-ই বারবার সে প্রশ্ন তুলেছে।
‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’ সেই সঙ্গেই বলেছে, ভারতের কোটি কোটি গরিব মানুষ, যাদের হাতে স্মার্টফোন নেই, এই অ্যাপ তাদের কোনও কাজেই আসবে না।
সরকারের মন্ত্রীরা ও শাসক দল বিজেপির শীর্ষ নেতারা অবশ্য এসব সমালোচনা গায়েই মাখছেন না।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডির কথায়, ‘যারা আরোগ্য সেতু অ্যাপ নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতে চাইছেন তাদের মনে করিয়ে দেব- দেশে তো ৩৩ কোটি গরিব মানুষের ব্যাঙ্কে জনধন অ্যাকাউন্টের তথ্যও কোনো না কোনো অ্যাপেই ধরা আছে। ৮ কোটি গরিব নারীকে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া আছে, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার সুফল পেয়েছেন ৫০ কোটি মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের তথ্য যদি সরকারের হাতে নিরাপদ থাকতে পারে, তাহলে আরোগ্য সেতু নিয়ে অসুবিধা কোথায়? অ্যাপ যারা ব্যবহার করছেন, তাদের কোনও সমস্যা নেই – আপত্তি শুধু রাজনীতিবিদদের?’
সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও দাবি করেছেন, আরোগ্য সেতুর ডেটা সুরক্ষা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তার কারণ নেই।
সরকার এটাও বুঝিয়ে দিয়েছে, বিরোধী দলগুলো বা নানা গবেষণা সংস্থার আপত্তি অগ্রাহ্য করেই তারা দেশজুড়ে আরোগ্য সেতু অ্যাপের প্রচার ও প্রসার চালিয়ে যাবে।
খবর বিবিসি