করোনা মোকাবেলায় জোটবদ্ধ হয়েছে ৬টি মানবিক সহায়তা সংস্থা

SHARE

নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একযোগে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশে কর্মরত প্রথম সারির ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা-প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন, কেয়ার বাংলাদেশ, অক্সফাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন এবং কারিতাস বাংলাদেশ।

কনসোর্টিয়ামটি ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়গুলোর জন্য স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি এবং পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যকর কর্মসূচির ব্যবস্থা ও উন্নত সেবাদানের মাধ্যমে কভিড -১৯ এর ব্যাপকতা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কভিড -১৯ কে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ করে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়সহ দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের জন্যএটি একটি উদ্বেগের বিষয়।

প্রায় সাড়ে চার লাখ স্থানীয়জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারে বসবাসরত দশ লাখেরও বেশি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। যদিও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এখনো পর্যন্ত কভিড-১৯ পজেটিভ শনাক্ত হয়নি, ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পরিষ্কার পানি ও স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত উপকরণগুলোর সীমিত সুযোগ, পাশাপাশি পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুবিধার অভাবে শিবিরগুলোতে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রোগের দ্রুত প্রসারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্ষার মৌসুম আসন্ন হওয়ায় মানবিক সহায়তা বিশেষজ্ঞরা দুই ধরণের জরুরি অবস্থা নিয়েই উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের সাথে বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় যুক্ত হলে একটি বড় সঙ্কট সৃষ্টি করবে এবং এই ভাইরাসের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করবে।

অস্ট্রেলিয়ান হিউম্যানিটারিয়ান পার্টনারশিপ, অস্ট্রেলিয়া সরকার এবং মানবিক সংস্থাগুলোর একটি অংশীদারি জোট, যার মাধ্যমে সংস্থাগুলো সংঘাত, বিপর্যয় এবং অন্যান্য মানবিক সংকট মোকাবেলায় জীবন বাঁচাতে, দুর্দশা লাঘবে এবং আক্রান্তদের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ করে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে, ছয়টি মানবিক সংস্থা স্বতন্ত্রভাবে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন এবং মানবিক কর্মসূচী পরিচালনা করছে এবং সম্প্রতি কভিড-১৯ মহামারীতে সাড়া দিতে এগিয়ে এসেছে।

সংস্থাগুলো মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কিট বিতরণ, স্বাস্থ্যবিধি ও হাত ধোয়ার অনুশীলন প্রচার, পরিষ্কার পানির পয়েন্ট স্থাপন, নগদ ক্যাশ ও ভাউচার বিতরণ, ইতিবাচক অভিভাবকসুলভ আচরণের প্রচার এবং বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ যত্ন, শিশু সুরক্ষা, যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) বিতরণ এর মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করবে।

দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট মানবিক চাহিদা পূরণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে।

সেভ দ্য চিলড্রেন ৪৭ হাজার রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সাতটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করছে এবং কমিউনিটি কেস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য দুই কোটি সাত লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।

কেয়ার বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত চলমান প্রকল্পগুলোর আওতায় প্রায় ১২ হাজার লোকের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে।

অক্সফাম কভিড-১৯ এর কারণে শরণার্থী শিবিরের ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তার জন্য প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা করেছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন ২৬ হাজার ৯৬৫ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষের সহায়তার জন্য দুই কোটি ৭০ লাখ টাক্ বরাদ্দের পরিকল্পনা করেছে।

কারিতাস বাংলাদেশ, ক্যান ডু নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে, প্রায় ২২ দশমিক ২৪ মিলিয়ন টাকা কারিতাস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাওয়া তহবিল থেকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং পিপিই সরবরাহ করছে সামনের সারির সহায়তাকর্মীদের জন্য।

এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ান হিউম্যানিটারিয়ান পার্টনারশীপের মাধ্যমে বাস্তবায়িত বাংলাদেশে কর্মরত ছয়টি আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার তিন বছরের কনসোর্টিয়াম প্রোগ্রামে বরাদ্দকৃত ৪৪ মিলিয়ন ডলার অর্থে।

কনসোর্টিয়ামভুক্ত সংস্থাগুলো এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুরক্ষা পরিষেবা সরবরাহ করবে। এই প্রোগ্রামটি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষকে আরও স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করবে।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা সংস্থাগুলি স্থানীয়করণ, ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর প্রতি জবাবদিহিতা, যৌথ সহায়তা কার্যক্রম এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বিত কার্যক্রমের লক্ষ্যে মানবিক ব্যবস্থার উন্নতিতে একত্রে কাজ করবে।
এএইচপি-সমর্থিত কনসোর্টিয়াম, সংকটে মানবতাবাদী সহায়তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানায়।
সংস্থাগুলো বাংলাদেশের যেসব এলাকায় অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেসব অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।

২০১৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ান তহবিল কক্সবাজারে মানবিক সহায়তার নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। এই তহবিলের ফলে ৪৮ হাজারেরো বেশি শিশু উপকৃত হয়েছে এবং সংকটে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পরিষ্কার পানি, আশ্রয় এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারির সময়েও অস্ট্রেলিয়ান এইড বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সহায়তায় তাদের কর্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।