ভিডিও ফাঁসের আতঙ্কে পাপিয়ার কাছে যাতায়াতকারীরা

SHARE

‘আমার সঙ্গে তাঁর (পাপিয়া) কখনো দেখাই হয়নি। কিন্তু তদন্তে তো আপনার নাম আসছে। কি বলেন, সত্য নয়। মানসম্মানটা রাইখেন। আমি অনৈতিক কাজে জড়িত নই।’ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গী ছিলেন বা ছিলেন না—এমন শতাধিক প্রভাবশালী লোক ভীত হয়ে এভাবেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ফোন করে ‘আত্মপক্ষ সমর্থন’ করছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সচিব পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন রয়েছেন জানিয়ে সরকারের একটি বিশেষ সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ, অবৈধ অর্থের মালিকরা এখন রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছেন। খোঁজ রাখছেন এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের দিকেও।

গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা সূত্রও কালের কণ্ঠকে এমন অনেক তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা নজর রাখছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী আরো অনেক প্রভাবশালী লোকজনকে পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হবে। যেভাবে একসময় ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতরা গ্রেপ্তার হয়েছিল।

সমাজের এসব হাইপ্রোফাইল ভিআইপির আসল চরিত্র ফাঁস হয়ে পড়ায় তাদের অন্ধকার জগৎ নিয়ে আমজনতার কৌতূহলের শেষ নেই। মুখরোচক আলোচনা এখন চায়ের দোকান থেকে শুরু তরে অলিগলি সবখানে। শুধু ওয়েস্টিন নয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় পাপিয়ার আরও অনেক অভিজাত ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে।

যাদের মধ্যে মহিলা যুবলীগের আরও কয়েকজনের আমলনামা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগির তাদের বিরুদ্ধেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হবে। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজনদের নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সমাজের যেসব ডাকসাইটে দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী পাপিয়াদের ডেরায় প্রটোকল ছাড়া হাজির হতেন, তারা এখন গোপন ভিডিও ফাঁসের আতঙ্কে আছেন।

অনেকের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্যও জানে অন্ধকার জগতের এই পাপিয়ারা। দুর্নীতি সংক্রান্ত বড় বড় কাজের লেনদেনের সাক্ষীও এদের কয়েকজন। তাদের ধারণা, পাপিয়ার সহযোগীরা যে কোনো সময় তাদের গোপন ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে দিতে পারে। এমনটা হলে অনেকেরই অবস্থা হবে জামালপুরের আলোচিত ডিসি আহমেদুল কবিরের মতো।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ফোন করছেন গুলশানের ওই অভিজাত হোটেলে নিয়মিত যাতায়াত ছিল এমন অনেক প্রভাবশালী লোকজন। এর সঙ্গে না জড়াতে তাঁদের অনেকেই অনুরোধও করছেন।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। এই অপকর্মের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকেও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।’