কাশ্মীর নিয়ে কথা বলায় ব্রিটিশ এমপির ভিসা বাতিল!

SHARE

গত বছরই ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ডেবি আব্রাহামস। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পর প্রতিবাদপত্রও লিখেছিলেন তিনি। ডেবি আব্রাহামসের অভিযোগ, সোমবার ভারতে পা রাখামাত্রই তাকে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। বৈধ ভিসা থাকার পরও খারিজ করেছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। শুধু তা-ই নয় , তার সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। যদিও এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ ডেবি এর সবিস্তার বিবরণ দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সকাল ৯টা নাগাদ দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। ব্যক্তিগত কাজে এক সঙ্গীকে নিয়ে দু’দিনের জন্য ভারতে এসেছিলেন। বিমানবন্দরে ঢোকার পর রুটিনমাফিক ইমিগ্রেশন ডেস্কে নিজের ভিসা এবং অন্যান্য নথিপত্রও জমা দেন। সে সময় তাকে জানানো হয়, তার ই-ভিসা খারিজ হয়ে গেছে।

ডেবি বলেন, অন্য সকলের মতোই ই-ভিসা এবং সমস্ত নথি নিয়ে ইমিগ্রেশন ডেস্কে গিয়েছিলাম। আমার ছবি তোলার পর এক জন কর্মকর্তা (কম্পিউটার) স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তে থাকেন। এরপর জানান, আমার ই-ভিসা খারিজ হয়ে গেছে। এর কিছুক্ষণ পর আমার পাসপোর্ট নিয়ে মিনিট দশেকের জন্য গায়েব হয়ে যান তিনি। এর পর যখন ফিরে এলেন, বেশ রূঢ়ভাবে চিৎকার করে বলেন, আসুন আমার সঙ্গে। তাতে আপত্তি করেছিলাম।

ডেবির দাবি, গত অক্টোবরে ভিসা করিয়েছিলেন তিনি। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু তার পরও তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি, তার সঙ্গে অপরাধীদের মতো ব্যবহার করেছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তরা। ডেবি বলেন, আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে লেখা ছিল, ‘ডিপোর্টি সেল’। এর পর আমাকে সেখানে বসতে বলেন ওই কর্মকর্তা। আমি তার কথা শুনিনি। কী জানি! তারা কী করতেন আমার সঙ্গে, কোথায় নিয়ে যেতেন! আমি চেয়েছিলাম, আশপাশের মানুষজন ব্যাপারটা দেখুক।

ভারতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে দিন দুয়েক থাকতে এসেছিলেন ডেবি। তবে বিমানবন্দরের ওই ঘটনার পর তা যে সম্ভব হয়নি। এরপর সেখান থেকেই ওই আত্মীয়কে ফোন করেন। এমনকি, ব্রিটিশ হাইকমিশনেও ফোন করেছিলেন তিনি। ডেবি জানান, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’র আবেদনও করেছিলেন। তবে তা-ও মেলেনি।

ডেবি জানান, কেন তার ভিসা খারিজ বলে জানানো হয়েছিল, বিমানবন্দরের কেউই যেন তার আসল কারণ জানতেন না। তিনি লিখেছেন, বিমানবন্দরে দায়িত্বে রয়েছেন বলে মনে হচ্ছিল, এমন এক কর্তাব্যক্তিও এই ঘটনার কারণ জানেন না। শুধু জানান, তিনি সত্যিই দুঃখিত, যে আমার সঙ্গে এমনটা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমি শুধু ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি… যদি না, ভারত সরকারের মনের পরিবর্তন হয়! আমার সঙ্গে যে অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে, তা-ও ভুলে যেতে রাজি আছি। আশা করি, আমার বন্ধুবান্ধব-পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেবেন তারা।

এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও এনিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ঠিক কী কারণে ডেবি আব্রাহামসের ভিসা বাতিল বলে জানানো হল, তা নিয়ে এখনো অন্ধকারে ডেবির ওই সফরের সঙ্গী হরপ্রীত উপল। তবে অনেকের মতে, এর পেছনে মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতির বিরোধিতা করাটাও একটা কারণ হতে পারে।

গত বছরের ৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পরই তার প্রতিবাদে ব্রিটেনে ভারতীয় দূতাবাসে একটি চিঠি লিখেছিলেন ডেবি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এই সদস্য ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর কাশ্মীর’র প্রধান হিসাবেও কাজ করছেন দীর্ঘদিন। কাশ্মীর নিয়ে মোদি সরকারের নীতির বিরোধিতায় বরাবরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন ডেবি।