লিখেছেন সম্পাদকঃ ইমারত হোসেন
ফুল সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর দেওয়া নিয়ামতগুলোকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এদের বিভিন্ন ধরনের লোককে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের ফুলস্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তুমি সেসব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কোরো না। তোমার পালনকর্তার দেওয়া রিজিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩১)
উপরোক্ত আয়াতে ‘জীবনের ফুল’ (জাহরাতুল-হায়াত) বাক্যাংশে ‘ফুল’ শব্দটি সৌন্দর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে পরোক্ষভাবে ‘জীবনের ফুল’ বলে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকগুলোকে বোঝানো হয়েছে। বাস্তবেই মানুষের রিজিকের সঙ্গে ফুলের যোগসূত্র রয়েছে।
কারো কারো মতে, পৃথিবীতে ফুলের জন্ম আজ থেকে ১৩০ কোটি বছর আগে ক্রেটাশিয়াস যুগে। ফুলের সঙ্গে এসেছে ফল ও শস্য, যা না হলে পৃথিবীতে আজকের যে প্রাণীদের দেখতে পাই, তাদের বিশাল অংশের জন্ম হতো না। একবিংশ শতাব্দীতে বেঁচে আছে দুই লাখ ৭০ হাজার রকমের ফুল। ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর প্রাণীদের বিশাল অংশের খাদ্য আর টিকে থাকা। বাংলাদেশে একসময় মানুষ শখের বসে ফুলবাগান করত। কিন্তু এখন ফুলের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে জড়িয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। বাংলাদেশের ২৪টি জেলায় প্রায় তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল উৎপাদনে জড়িত আছে প্রায় ১৫ হাজার কৃষক এবং ফুল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসায়ে অন্তত এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে। ফুল সেক্টরের কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করছে প্রায় সাত লাখ মানুষ।
সাহাবায়ে কিরামের বাগানেও শোভা পেত ফুলগাছ। আবু খালদাহ (রহ.) বলেন, আবুল আলিয়াহ (রহ.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আনাস (রা.) কি নবী (সা.) থেকে হাদিস শুনেছেন? আবুল আলিয়াহ (অবাক হয়ে) বলেন, তিনি তো একাধারে ১০ বছর তাঁর সেবা করেছেন এবং তাঁর জন্য নবী (সা.) দোয়া করেছেন। তাঁর একটি বাগান ছিল, যাতে বছরে দুইবার ফল ধরত। ওই বাগানে একটি ফুলগাছ ছিল, যা থেকে কস্তুরীর ঘ্রাণ আসত। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৩৩)
ফুল কখনো কখনো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। প্রিয় নবী (সা.) তাঁর প্রিয় দুই নাতিকে তুলনা করেছিলেন ফুলের সঙ্গে। ইবনে আবু নুম (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি ইবনে ওমর (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তিনি বলেন, তুমি কোথাকার লোক? সে বলল, ইরাকের। তিনি বলেন, দেখো তাকে! সে আমাকে মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। অথচ তারা নবী (সা.)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তারা দুজন পৃথিবীতে আমার দুটি ফুল। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৪)
ফুল নিয়ে কবিতা লেখেননি কিংবা প্রেয়সীকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করেননি এমন কবি পাওয়া দুষ্কর। বাংলাদেশের কবিরাও এর ব্যতিক্রম নন। যেমন, ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি, দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!’ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ফুলের ফসল নামক কবিতার কয়েকটি লাইন বা পঙক্তি। অনেকে মনে করে, কবিতাংশটুকু মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিস বা বাণীর অনুকরণে লিখেছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। কথাটি ঠিক নয়। তবে একটি হাদিস এমন পাওয়া যায়, যেখানে রাসুল (সা.) কেউ ফুল দিলে তা প্রত্যাখ্যান করতে নিষেধ করেছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কাউকে কোনো ফুল দেওয়া হলে সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কেননা তা বহনে হালকা ও ঘ্রাণে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৮৭)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কেউ ফুল দিলে তা প্রত্যাখ্যান করতে নেই। কিন্তু ফুল নিতে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকলে কিংবা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেটি ভিন্ন কথা।