ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে এক অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মূলত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে অবহিতকরণের মাধ্যমে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।
অ্যাডভোকেসি সভার শুরুতে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল, বংশবিস্তার, রোগ-জীবাণু বহন, মানুষকে আক্রান্ত করাসহ বিশ্বে ডেঙ্গু রোগের সামগ্রিক চিত্র ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) সার্ভিলেন্স মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. তৌহিদুল হক। এতে বলা হয় এ পর্যন্ত পৃথিবীর ১২৬টি দেশে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে ২৫০ কোটির অধিক মানুষ, অর্থ্যাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে, এসব দেশে প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করার রেকর্ড থাকলেও গত আগস্টে ছিলো এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। সারা দেশে এ এক মাসেই প্রায় ৫৩ হাজার রোগী ভর্তির রেকর্ড করা হয়, যার অধিকাংশই ছিলো রাজধানী ঢাকায়। তবে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক ছিলো এবং ধারণা করা হচ্ছে, এবছরও একই সময়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। একই সাথে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানো হয়, যার মধ্যে এ রোগ প্রতিকারে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও এডিস মশার উপর গবেষণা অন্যতম।
অ্যাডভোকেসি সভায় এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের সচিত্র পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্ণেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার। তিনি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ২০১৯ সালে ডিএনসিসির সামগ্রিক কার্যক্রম ও ২০২০ সালে চলমান এবং আসন্ন এডিস মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এ রোগ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নাই। সে লক্ষ্যে আমরা গত বছর বিভিন্ন আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একাধিক অবহিতকরণ সভা, সচেতনতামূলক পদযাত্রা ও পথসভা, বাউল সঙ্গীত, জাতীয় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি, সচেতনতামূলক বার্তা, টেলিভিশনে টিভিসি প্রচার ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।
এছাড়া ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম দেশের জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দ ও টেলিভিশন মালিক ও বার্তা প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, যা এবছরও চলমান থাকবে।
লে. কর্ণেল সারওয়ার আরো বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভুতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একেকজন ‘অ্যাম্বাসেডর’ হিসাবে কাজ করতে পারে। গতবছর তারা নিজেরা নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করার পাশাপাশি প্রতিবেশীর বাসা-বাড়িও পরিদর্শন করে এডিস মশার প্রজননস্থল ধবংস করেছে। আমরা এবারও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একই প্রত্যাশা করছি। এছাড়া মেয়রের নেতৃত্বে ডিএনসিসির সকল বিভাগ ও সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণের সমন্বয়ে আমরা ‘চিরুনি অভিযান’ পরিচালনা করি।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের ইমামগণ সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। মানুষ তাদের বয়ান শুনে, তাদেরকে মান্য করে। গত বছরও ইমামগণ প্রতি জুমার নামাজে তাঁদের বয়ানে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব নিয়ে আলচনা করেছেন, যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিলো। আমরা আশা করবো, এবারও ইমামদেরকে আরো জোরালো ভাবে আমাদের পাশে পাবো।
তিনি আরো বলেন, আমরা মশক নিধন কার্যক্রম আরো বেগবান করতে এরই মধ্যে ২০০টি ফগার মেশিন, ২৩৮টি পালস ফগমেশিন, ১৫০টি হার্টসন হস্তচালিত মেশিন, ৩৪০টি প্লাস্টিক হস্তচালিত মেশিন, ২টি ভেহিকল মাউন্টিং ফগার মেশিন, ১০টি মটরসাইকেল ফগার ও হস্তচালিত মেশিন, ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার/পাওয়ার স্প্রে মেশিন ক্রয়পূর্বক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতে আরো কয়েকটি ভেহিকল মাউন্টিং ফগার মেশিন ক্রয় করার পরিকল্পনা আছে। আমরা বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় ১ হাজার বিঘা জলাশয়/ডোবা/পুকুর এর জলজ আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করেছি, যা এখনও চলমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, আমরা গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। আমরা খুঁজে বের করেছি কোথায় কোথায় এডিস মশা প্রজনন করে, কোথায় এদের ঘনত্ব বেশি, কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে এবার আমরা বছরের শুরু থেকেই পুরোদমে কাজে নেমেছি।
তিনি বলেন, ২০২০ সাল বিভিন্নভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এ বছরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ যাতে এডিস মশার উপদ্রব ছাড়াই বছরব্যাপী এ উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে সেজন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
ডিএনসিসির অঞ্চল ১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকারনাইন এর সভাপতিত্বে এবং সিডিসির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির অঞ্চল ৬ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন, অঞ্চল ৭ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস, অঞ্চল ৮ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, উত্তরার বিভিন্ন কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দসহ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, উত্তরার বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ এবং মসজিদের ইমামগণ উপস্থিত ছিলেন।